গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষে নিহত রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও সোহেল রানার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (২১ জুলাই) সকালে নিহতদের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা এ আবেদন করলে আদালত এই নির্দেশ দেন।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আদালতের নির্দেশে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নিহতদের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হবে। প্রথমে গোপালগঞ্জ পৌর কবরস্থানে গিয়ে নিহত রমজানের মরদেহ উত্তোলন করা হবে।

এর আগে গত শনিবার রাতে, গোপালগঞ্জ সদর থানার ৪ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মোট চারটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে তিনটি মামলায় ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে, এবং একটি মামলায় ৮০০ থেকে ৯০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিবরণী:

রমজান কাজী হত্যা মামলা: সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আইয়ুব হোসেন এই মামলাটি দায়ের করেন, যেখানে ৮০০ থেকে ৯০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত বুধবার (১৬ জুলাই) এনসিপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে মাদারীপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময় শহরের এসকে সালেহিয়া মাদরাসার কাছে এনসিপি'র গাড়িবহরে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধা দিলে হামলাকারীরা তাদের ওপর গুলি চালায়। এ সময় রমজান কাজী (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন এবং হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

দীপ্ত সাহা হত্যা মামলা: সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম হোসেন ১৯ জুলাই গভীর রাতে অজ্ঞাতনামা ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ জনকে আসামি করে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়েছে, গত বুধবার (১৬ জুলাই) এনসিপির গাড়িবহরে হামলার খবর শহরে ছড়িয়ে পড়লে কলেজ মসজিদের পাশে মিলন ফার্মেসির সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিরোধ করতে গেলে হামলাকারীরা গুলি চালায়। এতে দীপ্ত সাহা (২৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন এবং হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

সোহেল রানা মোল্লা হত্যা মামলা: একই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ জনকে আসামি করে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, লঞ্চঘাট এলাকায় হোটেল রাজের সামনে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী এগিয়ে এলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এ সময় মোবাইল ব্যবসায়ী সোহেল রানা মোল্লা (৩০) মারাত্মক আহত হন এবং হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ইমন তালুকদার হত্যা মামলা: সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ মিজানুর রহমান ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়েছে, গত ১৬ জুলাই আসামিরা শহরের পুরাতন সোনালী ব্যাংকের সামনে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধা দিলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ইমন তালুকদার আহত হন এবং পরে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।