জুলাই আন্দোলনের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাবকে হত্যা করে পুলিশ।
গতকাল সোমবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এমন জবানবন্দি দেন সাক্ষী মোহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, আমি সিলেটের দৈনিক ৭১ এর কথা পত্রিকার ফটো সাংবাদিক। ১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার দেশব্যাপী বিএনপির গায়েবানা জানাজার কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেটের মধুবন পয়েন্টের কাছে কালেক্টরেট জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমি সেখানে যাই। জানাযা শেষে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি জিন্দাবাজারের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ পেছন দিক থেকে অতর্কিতে গুলী চালায়।
মোহিদ হোসেন আরও বলেন, সহকর্মী সাংবাদিক আবু তুরাব এবং আমি এবং আমি দায়িত্ব পালন করছিলাম। পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করেই গুলী চালাচ্ছিল। আমি হাত তুলে বলছিলাম, দস্তগীর ভাই (এডিসি), আমরা সাংবাদিক, আমাদের গুলী করবেন না। কিন্তু তবুও পুলিশ গুলী চালাতে থাকে। পুলিশের গুলীতে আমার সহকর্মী দৈনিক জালালাবাদ ও নয়া দিগন্ত পত্রিকার ফটো সাংবাদিক আবু তুরাব গুলীবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে আমি রিকশায় করে এবং পরে সিএনজিতে করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই।
তিনি বলেন, সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন চিকিৎসায় বাধা দেয়। পরে তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে তিনি মারা যান। পুলিশের এডিসি সাদিক কাউসার দস্তগীর, কোতোয়ালি থানার এসি মিজানুর রহমান, কোতোয়ালি থানার ওসি মহিউদ্দিনসহ আরও অনেকে গুলী চালান।
এ ঘটনায় একটি ভিডিও সংগ্রহ করেছি। ভিডিও সম্বলিত একটি পেনড্রাইভ আজ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করলাম। এই সেই পেনড্রাইভ (বস্তু প্রদর্শনী- XVIII )। ভিডিওটি আদালতে প্রদর্শিত হয়। এতে দেখা যায়, বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলী বর্ষণ এবং গুলীবিদ্ধ সাংবাদিক আবু তুরাবকে মাটিতে বসে থাকতে ও পরে আমাকে তাকে রিকশায় করে হাসপাতালে নিতে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আল জাজিরা ও বিবিসির ডকুমেন্টারির মাধ্যমে জানতে পারি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলী চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে আরও জানতে পারি, এ ঘটনার জন্য তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের প্রধান, স্বরাষ্ট্রসচিবসহ অনেকে দায়ী।