চট্টগ্রামে অনুমোদন ছাড়াই ৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত রোববার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এ মামলাটি করা হয়। দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আফরোজা খান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলায় ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে মেসার্স লা-অ্যারিস্টোক্রেসি-এর ঋণ হিসাবে বিভিন্ন সময় ৭৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৮৪ টাকা নেওয়ার পর তা পরিশোধ না করে পরে টাকাগুলো নগদ, পে-অর্ডার ও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২), (৩) ধারা এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় দুদক আইন, ২০০৪-এর ১৯(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ছাড়াও আসামির তালিকায় ব্যাংকটির সাবেক তিন ব্যাংক কর্মকর্তা, ১২ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক ও চারজন ব্যবসায়ী রয়েছেন।

আসামিরা হলেন ব্যবসায়ী আকিজ উদ্দীন, লা-অ্যারিস্টোক্রেসি রেস্টুরেন্টের মালিক নাজমে নওরোজ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী, ব্যাংকের কাজীর দেউড়ি মহিলা শাখার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক সৈয়দা নাজমা মালেকা, একই শাখার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক হুমাইয়ারা সাঈদা খানম, জেড আর জে সার্ভের স্বত্বাধিকারী শফিকুল করিম, মিশকাত ট্রেড সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মিশকাত আহমেদ, আরিফ হাসনাইন রাবার সাপ্লায়ায়ের মালিক আরিফ হাসনাইন, নুর ট্রেডাসের মালিক জসিম উদ্দিন, মেসার্স মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক জুয়েল মিয়া, রিমঝিম শাড়ি হাউজের স্বত্বাধিকারী জুয়েল, আগমন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এরশাদ সিকদার, এম এইচ এন্টারপ্রাইজের মালিক মনিরুল হক, নিউ বসুন্ধরা জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী যিশু বণিক, মেসার্স আল মদিনা স্টিলের মালিক মো. আলমগীর, হক মেরিন ফিশের মালিক মাহবুবুল হক, মোহাম্মদ শাহ আলম, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও মোহাম্মদ ইকবাল।

মামলায় বলা হয়, ২০১১ সালে ১২ সেপ্টেম্বর লা-অ্যারিস্টোক্রেসি রেস্টুরেন্টের মালিক নাজমে নওরোজ তাঁর প্রতিষ্ঠানের নামে চটগ্রামের কাজীর দেউড়িতে অবস্থিত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মহিলা শাখায় একটি হিসাব খোলেন।

আসামি নওরোজের সঙ্গে অপর আসামি এস আলমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠতা ও সরাসরি যোগাযোগ ছিল। সেই সুবাদে নওরোজ ২০১১ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ নেন এবং বিভিন্ন সময় ঋণ দ্রুত পাইয়ে দিতে এস আলম সহায়তা করেন।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়, ঋণসীমা দেড় কোটি টাকা হওয়ায় প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অনুমোদন ছাড়া বিভিন্ন পরিমাণের টাকা লা-অ্যারিস্টোক্রেসি ঋণ হিসাবে নেওয়া হয় এবং পরে টাকাগুলো নগদ, পে-অর্ডার ও অন্য হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। দুদকের অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১১ সালে ঋণ নেওয়ার পর ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ঋণের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ অডিট আপত্তি উঠেছিল।

অডিট আপত্তিতে সীমাতিরিক্ত ঋণ দেওয়া, ঋণের কিস্তি অনাদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগ উল্লেখ থাকার পরও আপত্তির বিষয়গুলো নিষ্পত্তি ছাড়াই ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে লা-অ্যারিস্টোক্রেসির ঋণ হিসেবে বিপুল অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে।