গাজীপুরে বহুল আলোচিত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ। ঘটনাটি শুধু একটি হত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার সাধারণ নাগরিক বাদশা মিয়াকে কোপানোর ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে নির্মমভাবে প্রাণ হারান সাংবাদিক তুহিন।

ঘটনার ১১ কর্মদিবস পর, ২৪ আগস্ট (রবিবার) আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, “হানি ট্র্যাপ” কৌশল ব্যবহার করে বাদশা মিয়াকে ফাঁদে ফেলে খুনের চেষ্টা চালায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র।

৭ আগস্ট ২০২৫, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা চান্দনা চৌরাস্তার ইবিএল এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে ফিরছিলেন বাদশা মিয়া (৩৫)। এ সময় আসামি পারুল আক্তার গোলাপী (২৮) তাকে উত্যক্ত করতে থাকে। বাদশা প্রতিবাদ করলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা খুনিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।

এ দৃশ্য নিজের মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে থাকেন সাংবাদিক তুহিন। তখন গোলাপী চিৎকার করে বলে ওঠে—

“তুহিন সাংবাদিক ভিডিও করছে!” এরপর খুনিরা বাদশাকে ছেড়ে তুহিনের দিকে ধাওয়া করে। প্রথমে কেটু মিজান দা দিয়ে আঘাত করে, পরে স্বাধীন, সুমন, আরমান, আলামিন ও ফয়সাল মিলে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। একপর্যায়ে মিজান তুহিনের মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। গোলাপী আবার চিৎকার করে বলে—“পুলিশ আসছে।” তখন সবাই দ্রুত পালিয়ে যায়।

মুহূর্তেই সাংবাদিক তুহিন রক্তাক্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।

পরদিন নিহতের বড় ভাই সেলিম বাদী হয়ে বাসন থানায় মামলা নং-১৪, তারিখ ০৮/০৮/২০২৫, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোডে মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করে এবং সিসিটিভি ফুটেজ, ফরেনসিক রিপোর্ট ও প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে ৮ আসামিকে গ্রেফতার করে।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন: মোঃ মিজানুর রহমান ওরফে কেটু মিজান (৩৪), তার স্ত্রী পারুল আক্তার গোলাপী (২৮), মোঃ আল আমিন (২১), সুমন সাব্বির মামুন (২৬), মোঃ ফয়সাল হাসান (২২), মোঃ শাহজালাল জালাল (৩২), স্বাধীন সাদিক সেলিম (২৮), মোঃ রফিকুল ইসলাম আরমান (১৯)।

সোমবার (২৫ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) রবিউল হাসান এ সকল তথ্য উপস্থাপন করে সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনাস্থলের উপস্থিতি, অস্ত্রের ব্যবহার, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও প্রযুক্তিগত প্রমাণ মিলিয়ে তাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়েছে। চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।”

তুহিনের স্ত্রী ফরিদা আক্তার বলেন— “চার্জশিট দাখিলে আমরা স্বস্তি পেয়েছি। তবে এখনো তুহিনের ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার হয়নি। আমি সেই মোবাইল উদ্ধারের জোর দাবি জানাই এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”