# রায়ে নারী-পুরুষ সমান, অপরাধের ধরন বিবেচনায় শাস্তি দেওয়া হয়- প্রসিকিউশন
চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে আজ সোমবার রায় ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
গত ১৩ নভেম্বর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারক মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এ রায় আজ বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। রায়কে কেন্দ্র করে গোটা রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
বহুল আলোচিত এই মামলায় পাঁচটি অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- চেয়েছেন প্রসিকিউশন। অন্যদিকে, আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়েছেন তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। এছাড়াও রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের খালাস চেয়েছেন তার আইনজীবী।
এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস. এইচ. তামিম শুনানি করেন। এছাড়া প্রসিকিউটর বি. এম. সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদি, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। আর রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
পাঁচটি অভিযোগ
শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগের সবিস্তারে বর্ণনা করে প্রসিকিউশন। প্রথম অভিযোগ-গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। এতে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, নির্যাতন ও অন্যান্য অমানবিক আচরণের ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় অভিযোগ-হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ও অধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন। তৃতীয় অভিযোগ-রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চতুর্থ অভিযোগ-রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়। পঞ্চম অভিযোগ-আশুলিয়ায় নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসাবে প্রত্যক্ষদর্শী ও জীবিত ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য, অপরাধ সংঘটনের সময় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ, ড্রোন ও সিসিটিভি ফুটেজ, আসামিদের টেলিফোন সংলাপের অডিও ক্লিপ, ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণের ফরেনসিক প্রতিবেদন, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত তথ্য, ছবি ও ভিডিও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে পাওয়া দাপ্তরিক নথিপত্র প্রভৃতি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়।
ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের পিতা, চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে নিহত দশম শ্রেণির ছাত্র শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দিপ্তীসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট ৫৪ জন সাক্ষী এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
জুলাই হত্যাসংক্রান্ত অপরাধের নিউক্লিয়াস হিসাবে শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- দেওয়ার জন্য আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেছে প্রসিকিউশন। ১৪০০ আন্দোলনকারীকে হত্যা; হত্যায় উসকানি; প্ররোচনা ও নির্দেশদাতা; ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’-এসব অভিযোগ প্রমাণে প্রসিকিউশন ৮১ জন সাক্ষীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য, ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ, আলামত হিসাবে ৬৯টি অডিও ক্লিপ, ৩টি মোবাইল নম্বরের সিডিআর এবং ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়। মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয় ১০৫ দিনে। যুক্তিতর্কের সমাপনী দিনে ট্রাইব্যুনালের কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- দাবি করেছে প্রসিকিউশন।
এ রায় জানার জন্য সমগ্র জাতি উদ্গ্রীব হয়ে আছে। বিশেষ করে জুলাইয়ে নিহত শহীদপরিবার, আহতদের পরিবার ও জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব পক্ষই রয়েছে প্রতীক্ষায়। তাদের প্রত্যাশা, জুলাই আন্দোলনে নিরীহ ছাত্র-জনতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার দায়ে শেখ হাসিনার উপযুক্ত শাস্তি হতে হবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিগত সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুন, মানুষের ভোটাধিকার হরণ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগে পৃথক তদন্ত ও বিচার শুনানি চলছে।
১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়। বিচার শুনানি চলাকালীন সময়ে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রসিকিউশন জুলাই হত্যাকা- ও অপরাধ প্রমাণে তথ্য-উপাত্ত সবিস্তার তুলে ধরে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূলে নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদ্যতাগ করে পালিয়ে যাওয়ার দিন রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই দিন আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করে পুলিশ। প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকলে তার অধীন অন্য অপরাধীরা বিশ্বাস করতেন তারাও টিকে থাকবেন। শত অপরাধ করা সত্ত্বেও তারা নিরাপদে থাকবেন। শুধু তাই নয়; আনুগত্যের জন্য পুরস্কৃতও হবেন বলে মনে করতেন। এজন্য শেখ হাসিনাকে যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে হবে-এমন চেষ্টা ছিল তাদের। এমন চেষ্টা থেকেই কিলিং মিশনে নেমেছিল শেখ হাসিনার অধীন সব বাহিনীর কিছু অংশ। প্রসিকিউশন শেখ হাসিনাকে ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ ও তাকে টিকিয়ে রাখতে হত্যায় সহযোগীদের ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’ হিসাবে উপস্থাপন করেছে।
শুনানিকালে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ দিনে পুলিশ ও র্যাবের হেলিকপ্টার ৩৬ বার উড্ডয়ন করে। ওই সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধায় উড্ডয়ন ও অবতরণ করেছে হেলিকপ্টার। গণ-অভ্যুত্থানের সময় হেলিকপ্টার ব্যবহারের দুটি ভিডিও দেখানো হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, র্যাবের হেলিকপ্টার ঢাকার আকাশে উড়ছে এবং সেই হেলিকপ্টার থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের হেলিকপ্টার থেকেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ধোঁয়া উড়ছে। প্রসিকিউশন বলেছে, বাস্তবে আন্দোলনে গুলি হয়েছে ৫ হাজার রাউন্ড, হিসাব দিয়েছে ১০০ রাউন্ডের। হেলিকপ্টারে কত গোলাবারুদ তোলা হয়েছিল, কত গোলাবারুদ ফায়ার (ব্যবহার) করা হয়েছে এবং কত গোলাবারুদ অবশিষ্ট আছে, সেসবের তথ্যও তারা পেয়েছেন।
এ মামলায় তৃতীয় আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়েছেন। তিনি এই গণহত্যার পেছনের ঘটনা উন্মোচন করেছেন। একই সঙ্গে নির্দেশদাতা এবং বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নামও উঠে আসে তার জবানবন্দি থেকে। সাক্ষীদের জবানবন্দি, শেখ হাসিনার ফোনালাপের অডিও এবং ভিডিও ক্লিপ থেকে ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। তথ্যপ্রমাণে ওঠে আসে- জুলাই আন্দোলন দমনে ‘লেথাল উইপন’ ব্যবহার করে সরাসরি গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয় করে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বোম্বিং করার কথা বলেছিলেন এবং পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত ডকুমেন্টসে শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এসএম মাকসুদ কামাল এবং জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনের চারটি অডিও আদালতে উপস্থাপন করেন ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা। জবানবন্দিতে তানভীর হাসান জোহা আরও জানান, শেখ হাসিনার ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং তিনটি মোবাইল নম্বরের কল রেকর্ড জব্দ করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘লেথাল উইপন’ ব্যবহার করে সরাসরি গুলির নির্দেশে দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয় করে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বোম্বিং করার কথা বলেছিলেন এবং পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
‘রায়ে নারী-পুরুষ সমান, অপরাধের ধরন
বিবেচনায় শাস্তি দেওয়া হয়’
রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীর আলাদা প্রিভিলেজ (বিশেষ সুবিধা) নেই বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। তিনি বলেন, সিআরপিসি আইন অনুযায়ী জামিনের ক্ষেত্রে নারী, অসুস্থ ব্যক্তি ও কিশোরদের প্রিভিলেজ বা বিশেষ সুবিধা রয়েছে। তবে রায়ের ক্ষেত্রে নারীকে কোনো অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার বিধান সাধারণ কিংবা ট্রাইব্যুনাল আইনেও নেই। অর্থাৎ আসামি নারী নাকি পুরুষ তা বিবেচ্য নয়। বরং তিনি কী অপরাধ করেছেন সেই গ্রাভিটি বা গুরুতরতার ভিত্তিতেই শাস্তি নির্ধারণ হবে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হলে আসামি খালাস পাবেন।
গতকাল রোববার জুলাই গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার মামলার রায় উপলক্ষ্যে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তামিম বলেন, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সোমবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। আমরা আশা করছি কালই (সোমবার) এ রায় ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল-১। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আমরা প্রস্তুত আছি। এছাড়া অনুমতি সাপেক্ষে রায়ের যে অংশটুকু ট্রাইব্যুনাল পড়ে শোনাবেন, তা বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে দেশের সব গণমাধ্যম।
তিনি বলেন, এ মামলায় আনা পাঁচটি অভিযোগই সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন। একইসঙ্গে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- প্রার্থনা করা হয়েছে। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ভুক্তভোগী শহীদ-আহত পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কথা জানিয়েছিলাম। ন্যায়বিচারের স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল যে আদেশ দিক না কেন প্রসিকিউশন তা মেনে নেবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে এটিই সর্বপ্রথম রায় হবে।
চলমান অন্য কোনো মামলায় প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে প্রসিকিউটর বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে যে কয়েকটি অভিযোগ আমরা এনেছি, একই অভিযোগে অন্য কোনো মামলা থাকলে আর চলবে না। কারণ সংবিধান অনুযায়ী এক ব্যক্তিকে একই অভিযোগে দুইবার বিচার বা শাস্তি দেওয়া যায় না। তবে এসবের বাইরে কোনো অভিযোগ থাকলে চলতে পারবে। ট্রাইব্যুনাল যে পাঁচটি অভিযোগ নিষ্পত্তি করছে, সেই অভিযোগে অন্য কোথাও নতুন মামলা করাও যাবে না। যদি পূর্বে কোনো মামলা থাকে, সেটিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্রজনতাকে রাজাকার বলে সম্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা একটি উসকানিমূলক বক্তব্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে একই রাতে তিনি তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে ফোনে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের আদেশ দেন। ১৮ জুলাই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। ফোনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে গুলি ও ড্রোনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার অবস্থান নির্ণয়ের নির্দেশ দেন। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী ১৪০০ ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজারও আন্দোলনকারী। তৃতীয় অভিযোগ ছিল রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা। চতুর্থ চানখারপুলে ছজনকে হত্যা ও পঞ্চম অভিযোগ ছিল আশুলিয়ায় ছজনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া। এই পাঁচটি অভিযোগে আমরা ফরমাল চার্জ দাখিল করেছিলাম।
রায়ের পর আসামিদের আপিল প্রসঙ্গে তামিম বলেন, আইনে পরিষ্কার করে বলা আছে যে যদি আসামি পলাতক হয় তাহলে রায়ের পর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন। যদি তিনি গ্রেপ্তার হন অথবা ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করেন। অন্যথায় স্টেট ডিফেন্সের কোনো এখতিয়ার নেই। যেসব আসামি এ মামলায় পলাতক রয়েছেন তারাও গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণ ছাড়া আপিল করতে পারবেন না।