যশোরের চৌগাছায় ২০১৬ সালে গ্রেফতারের পর বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে ছাত্রশিবিরের দুই নেতাকে গুলী করার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকিকুল ইসলামসহ তিন পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এসআই আকিকুল ছাড়া গ্রেফতার অন্য দুজন হলেন, চৌগাছা থানার তৎকালীন কনস্টেবল সাজ্জাদুর রহমান ও কনস্টেবল জহরুল হক।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে গতকাল সোমবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন।
এদিন ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান। তিনি এ মামলায় গ্রেফতার তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের নিয়ম অনুযায়ী আলাদা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর সাজ্জাদুরকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করেছে পুলিশ। এ-সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শুনানির আগে সাজ্জাদুরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর আকিকুলকে গ্রেফতার করে হাজির করা হয়। তার আগে এ মামলায় আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার নাম আতিকুল ইসলাম। দুজনই ওই সময় চৌগাছা থানায় কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যে গ্রেফতার আতিকুল তৎকালীন ইন্সপেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন। তাকে এর আগে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রসিকিউটর জানান, ২০১৬ সালে যশোরের চৌগাছা থানা এলাকায় মোটরসাইকেলে যাওয়ার পথে ইসলামী ছাত্রশিবিরের দুই নেতাকে গ্রেফতার করে থানায় নেওয়া হয়। এরপর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে পরিচয় জানার পর তাদের সঙ্গে একটা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী দুজনকে আদালতে হাজিরের কথা ছিল। কিন্তু আগের দিন রাতে তাদের চোখ বেঁধে অন্যস্থানে নিয়ে দুই হাঁটুতে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলী করা হয়। তবে বন্দুকযুদ্ধে গুলী হয়েছে উল্লেখ করে আদালতে তোলা হয়। পরে শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠান আদালত। এরপর চিকিৎসা চলাকালে দুই শিবির নেতারই পা কেটে ফেলতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত সংস্থা। কারণ ওই সময় শুধু এ দুজনকেই গুলী করা হয়নি, গোটা বাংলাদেশেই বিরোধী রাজনৈতিক মতাবলম্বীদের গ্রেফতারের পর কারও হাঁটুতে, কারও হাতে কিংবা শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলী করে বিকলাঙ্গ করা হতো। এটা বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিপীড়নেরই অংশ ছিল। এরই অংশ হিসেবে চৌগাছার ঘটনাটি ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।