রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৬১ পলাতক আসামীর বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শেখ হাসিনাসহ ২৬১ আসামীকে পলাতক ঘোষণা করেছেন আদালত। জয় বাংলা ব্রিগেড সম্পর্কিত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাদের নাম উল্লেখ করে জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টার ও আমার দেশ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সিআইডি। গতকাল শুক্রবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১৭ নম্বর আদালতের বিচারক আরিফুল ইসলাম গত ৩০ অক্টোবর এ বিষয়ে আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশে আজ শুক্রবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিআইডি। সিআরপিসি ১৯৬ ধারার অধীনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে সিআইডি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাটি দায়েরের ক্ষমতা পায়। সেই অনুযায়ী সিআইডি বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে। মামলায় দণ্ডবিধির ১২১, ১২১(ক) ও ১২৪(ক) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। সিআইডির তদন্তে উঠে আসে, জয় বাংলা ব্রিগেড নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে দেশ ও বিদেশে বসে বৈধ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছিল। তদন্তে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, সার্ভার এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য সংগ্রহ ও ফরেনসিক বিশ্লেষণ করা হয়।
দ্রুততম সময়ে তদন্ত শেষে সিআইডি শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। তাদের মধ্যে ২৬১ জন পলাতক থাকায় আদালত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, মামলাটি এখন আদালতে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘বিচার’ এজেন্ডা বাস্তবায়নে সিআইডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ আসামীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে সিআইডি। আদালতে দাখিল করা ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামীদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন আদালত। সিআইডি জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জন ও অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে প্রথমে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু করা হয়। মামলা রুজুর পর সিআইডি সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, সার্ভার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য সংগ্রহ ও ফরেনসিক বিশ্লেষণ কার্যক্রম শুরু করে। সিআইডি আরও জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর জুমে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মিটিংয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাতের আহ্বান, গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠার ঘোষণাসহ রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য ছিল। এই তথ্যের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে মামলা হয়। তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষার পর শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. রাব্বি আলমসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের এই রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় সিআইডি। পাঁচ মাসেরও কম সময়ে তদন্ত শেষ করে শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৬ জন আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। মোট আসামীর মধ্যে অন্যান্য মামলায় এরই মধ্যে গ্রেফতার হওয়া ৯১ জনকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এছাড়া বাকি ১৯৫ জন আসামী পলাতক রয়েছেন।