আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে সংঘটিত গুম ও খুনের অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন।
প্যানেলের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
সকালের শুরু থেকেই ট্রাইব্যুনাল চত্বর ও আশপাশের এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে মোতায়েন ছিলেন। ভোরের পরপরই ‘বাংলাদেশ জেল-প্রিজন ভ্যান’ লেখা সবুজ রঙের একটি প্রিজনভ্যানে করে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
দিনের শুনানি শেষে প্রধান প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আদালত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “কোন কারাগারে তাদের রাখা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী।”
এদিন ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালের গুম, খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধসংক্রান্ত তিনটি মামলার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এসব মামলায় ২৫ জন বর্তমান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৩২ জন অভিযুক্ত রয়েছেন।
যেসব কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে. এম. আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অব.), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লে. কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লে. কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম।
এছাড়া ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকীকেও জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে সকাল থেকেই কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টন ও হাইকোর্ট এলাকার আশপাশে টহল জোরদার করে রাখা হয়। ট্রাইব্যুনাল এলাকায় বিজিবি, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের সদস্যদের একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। সার্বিকভাবে পুরো এলাকাজুড়ে ছিল নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।