পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৩০ কাঠা প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকদের বিরুদ্ধে দুদকের করা তিন মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ মো. রবিউল আলমের আদালতে তিন মামলার বাদীরা সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীরা হলেন দুদকের উপপরিচালক সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া এবং সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান।

আগামি ২৮ আগস্ট এই তিন মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম। তিনি জানান, এদিন বেলা ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। একে একে তিনজন সাক্ষ্য দেন। তাদের সাক্ষ্য শেষ হয় পৌনে ৩টায়।

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ৬টি প্লট দুর্নীতির মামলায় গত ৩১ জুলাই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে তাদের সন্তানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ঢাকার দুই বিশেষ জজ আদালত। এর মধ্যে তিন মামলায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ১১ আগস্ট। ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে ওই তিন মামলার বিচার কাজ চলছে। এবার বিশেষ জজ রবিউল আলমের আদালতে বাকি তিন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হল।

শেখ পরিবারের বাইরে যে ১৬ জন আসামির তালিকায় রয়েছেন, তারা হলেন, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। তার পরিবারের অন্যরাও দেশের বাইরে। পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগ পাচ্ছেন না।

তাদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এরপর ১২ জানুয়ারি প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। পরদিন শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে মামলা করে সংস্থাটি। এরপর ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। এই ছয় মামলাতেই শেখ হাসিনাকে আসামি করেছে দুদক। অন্যদেরও কেউ কেউ একাধিক মামলার আসামি। সব মিলিয়ে ছয় মামলার আসামির সংখ্যা ২৩।

এসব মামলায় দুদক অভিযোগ করেছে, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। অযোগ্য হলেও তারা পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন।

হাসিনা ও তাঁর পরিবার রাজউককে মিথ্যা হলফনামা দেন

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাক্ষীরা আদালতকে বলেছেন, রাজউকের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী, ঢাকায় যাঁদের প্লট-গাড়ি-বাড়ি কিছুই নেই, তাঁরা মূলত সংস্থার প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু শেখ হাসিনার পরিবার রাজউকের কাছে মিথ্যা হলফনামা দেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, তাঁদের ঢাকা শহরে জমি-বাড়ি কোনো কিছুই নেই। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, শেখ হাসিনা পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের নামে বাড়ি-জমি-গাড়ি সবই আছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁরা রাজউকের ৬০ কাঠার প্লট নিয়েছেন, যা অপরাধ। সাক্ষীরা আরও বলেন, প্রভাব খাটিয়ে রাজউকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্লট বরাদ্দ নিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি করেছেন।