বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাইদের বুকে অসংখ্য গুলীর চিহ্ন ছিল বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জানিয়েছেন মামলার প্রথম সাক্ষী ৮৫ বছর বয়সী আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, জীবিত থাকতে ছেলে চাকরি করবে এটা দেখে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু এখন আবু সাঈদের হত্যার বিচার দেখে মরতে চাই।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আলোচিত এই হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এদিন ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষ্য দেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। এ সময় তিনি আবু সাঈদকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেই দিনের ঘটনা তুলে ধরেন। আদালতকে তিনি বলেন, আবু সাঈদের বুকজুড়ে ছিল অসংখ্য গুলির চিহ্ন।

তিনি বলেন, সেদিন জমি থেকে কাজ শেষে দুপুরে বাড়ি ফিরে দেখি সবাই কান্না করছে। পরে জানতে পারি আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে শুনি আবু সাঈদ মৃত্যুবরণ করেছে। এটি শোনার পরে মনে হলো, আমার মাথায় আসমান ভেঙে পড়েছে। আমি দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জামাইকে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাই। তখন তারা বলে, তার লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। পরে সেখানে গিয়ে শোনে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেয়া হয়েছে। পরে রাত ৩ টায় বাড়িতে লাশ নিয়ে আসা হয়। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ দাফনের চাপ দেয়া হয়।’ পরে ১৭ জুলাই সকালে দু’টি জানাযা শেষে আবু সাঈদের লাশ দাফন করা হয় বলে জানান শহীদের এই পিতা।

এর আগে, গত বুধবার আলোচিত এ মামলার সূচনা বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সূচনা বক্তব্যে তিনি তুলে ধরেন আবু সাঈদ হত্যার প্রেক্ষাপট।

তারও আগে গত ৬ আগস্ট বেরোবি’র সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

এদিকে সাক্ষ্যগ্রহণ উপলক্ষে সকালে মামলার ৬ আসামীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। তবে বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ জন এখনও পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষে ইতিমধ্যে সরকারি খরচে চারজন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

গত ২৮ জুলাই আলোচিত এ মামলার ৩০ আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। পরে ৩০ জুন এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয়া হয়। এর আগে গত ২৪ জুন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।