মিসর থেকে দুটি উড়োজাহাজার ভাড়া নিয়ে সরকারের ৭৪১ কোটি টাকা গচ্চা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক বিচারপতি এ এফ এম মেজবাউদ্দিনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, সে দিন সাবেক এই বিচারপতি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক কর্মকর্তাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে আদালত। তাদের মধ্যে পলাতক থাকায় সাতজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অপর ১৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা অন্যরা হলেন-বিমানের সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক পরিচালক ফজলে কবির, সাবেক পরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী, সাবেক পরিচালক আবু এসরার, সাবেক পরিচালক আবুল হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইকবাল আহমেদ।
জামিনে থাকা আসামিরা হলেন- বিমানের সাবেক পরিচালক ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ, সাবেক ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল আলম সিদ্দিক, সাবেক প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফ, সাবেক প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার দেবেশ চৌধুরী, সাবেক এয়ারক্রাফট মেকানিক মো. সাদেকুল ইসলাম ভূঁইয়া, প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার শরীফ রুহুল কুদ্দুস, সাবেক উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, সাবেক ইঞ্জিনিয়ার অফিসার মো. জাহিদ হোসেন, প্রকৌশলী কর্মকর্তা হীরালাল চক্রবর্তী, প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার অশোক কুমার সর্দার, প্রকৌশলী কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান।
অব্যাহতি পাওয়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক ইন্সপেক্টর অব এয়ারক্রাফট গোলাম সারওয়ার, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সফিউল আজম, সহকারী পরিচালক দেওয়ান রাশেদ উদ্দিন ও সাবেক সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল কাদির।
ইজিপ্ট এয়ার থেকে পাঁচ বছরের জন্য বিমান বাংলাদেশ দুটি বোয়িং উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার পর তা ২০১৯ সালে ফেরত দেওয়া হয়। এজন্য দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৩ সালে। এ দুটো উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিমানের ২৩ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক জেসমিন আক্তার। মামলায় ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা গচ্চা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত শেষে গত বছরের মে মাসে ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র এবং এজাহারভুক্ত ২৩ জনের মধ্যে ১৪ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক আনোয়ারুল হক। এর মধ্যে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন জন স্টিল মারা যান। পরে মামলাটি অধিকতর তদন্তে পাঠানো হয়। সেখানে সাবেক বিচারপতি এ এফ এম মেজবাউদ্দিন আরও সাতজনের নামে আসে। তাদের অভিযুক্ত করে ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। অধিকতর তদন্তে সরকারের ৭৪১ কোটি টাকা ক্ষতির তথ্য পায় দুদক।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ দুটি লিজ নিয়েছিল বিমান। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।
উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে ফের ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সে কারণে ইজিপ্ট এয়ার এবং মেরামতকারী কোম্পানি উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে। ফলে উড়োজাহাজ দুটির জন্য রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় ৭৪১ কোটি টাকা।