অন্তর্বর্তী সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন আদালতে।
গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি এএসএম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি সগীর হোসেন লিওন এই আদেশ দেন।
আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও ফজলুর রহমান এবং আইনজীবী এম আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া শুনানিতে ছিলেন। মঞ্জুরুল আলমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন ও রমজান আলী শিকদার এবং আইনজীবী প্রিয়া আহসান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।
সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এর আগে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে শাহবাগ থানার মামলায় ঢাকার সিএমএম আদালতের পর মহানগর দায়রা জজ আদালতেও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হয়েছিল। গত ৫ অক্টোবর শুনানি শেষে ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফারজানা ইয়াসমিনের আদালত এ আদেশ দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী তাহমিনা তাহেরিন মুন শুনানিতে জামিনের আবেদন করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ আবেদনের বিরোধিতা করা হয়। উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট একই মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, হাফিজুর রহমান কার্জন ও মো. আব্দুল্লাহ আল আমিনসহ মোট ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার অন্য আসামীরা হলেন সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না, কাজী এ টি এম আনিসুর রহমান বুলবুল, গোলাম মোস্তফা, মো. মহিউল ইসলাম ওরফে বাবু, মো. জাকির হোসেন, মো. তৌছিফুল বারী খান, মো. আমির হোসেন সুমন, মো. আল আমিন, মো. নাজমুল আহসান, সৈয়দ শাহেদ হাসান, মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, দেওয়ান মোহাম্মদ আলী এবং মো. আব্দুল্লাহীল কাইয়ুম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ২৮ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে মামলার বাদী দেখতে পান, বেশকিছু লোক রিপোর্টার্স ইউনিটির অডিটরিয়ামে কিছু লোককে ঘেরাও করে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বলে স্লোগান দিচ্ছে এবং সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বক্তব্য দিচ্ছেন।
লতিফ সিদ্দিকীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধের লক্ষ্যে গত ৫ আগস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য জাতির অর্জনকে মুছে ফেলার সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়া। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ওইদিন একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।’
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ওই গোলটেবিল বৈঠকে গ্রেফতার হওয়া আসামীরাসহ আরও ৭০-৮০ জন অংশ নেন। পরে পুলিশ আসামীদের হেফাজতে নেয়।
উপস্থিত লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী মঞ্চ ৭১ এর ব্যানারকে পুঁজি করে প্রকৃতপক্ষে দেশকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অস্থিতিশীল করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র ও উপস্থিত অন্যদের প্ররোচিত করে বক্তব্য প্রদান করছিলেন। তার এই ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্যের জন্য উপস্থিত লোকজন তাদের ঘেরাও করে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বলে স্লোগান দেন।