বিচারকদের নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন। পরে আগামীকাল বুধবার এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন।
শিশির মনির বলেন, ‘২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে নির্বাচন সঠিক হতো তা হলে শক্তিশালী সংসদ হতো। এরপর এ সংক্রান্ত বিষয়ে আরও শুনানির জন্য বুধবার (৩০ এপ্রিল) দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট।’
আজ হাইকোর্টের বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন।
শুনানিতে শিশির মনির বলেন, ‘একটি মামলার শুনানিতে প্রয়াত বিচারপতি টিএইচ খান বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করতে চান? দেশে আগুন জ্বলবে। এই ১৫ বছর দেশে আগুন জ্বলেছে। আমরা এত দিনে একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র পেতে পারতাম। যদি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে নির্বাচন সঠিক হতো। শক্তিশালী সংসদ হতো। আমাদের বিচারক নিয়োগ, বিচারকদের কাজ অনেক সুন্দর হতো।’
তিনি বলেন, ‘আমার এখনো মনে পড়ে, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন আমাদের এলাকার সংসদ সদস্য। তিনি একবার ২৫৬ ভোটে, অন্যবার ৬২২ ভোটে পাস করেছিলেন। তিনি সংসদে ভাষণ দেওয়ার সময় গ্রামের লোকজন রেডিওতে শুনতেন। এই জিনিস ধ্বংস করা হয়েছে। একদল ৫ বছর সরকারে থাকার পর অন্য দল আসতো। সমস্যা কোথায় ছিল? নির্বাচনব্যবস্থা, সংসদীয় ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বারোটা বাজিয়েছে। কত অপরিপক্ব কাজ হয়েছে!’
এই আইনজীবী বলেন, ‘এখনো যদি সঠিকভাবে যাত্রাটা শুরু করা যায়, রাজনীতি ফিরবে, বিচার বিভাগ ফিরবে। একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। সংসদের সামনে গেলে মনে হয় একটা ভবন দাঁড়িয়ে আছে। কোনো আলোচনা নেই, পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক নেই। সরাসরি সম্প্রচার নেই। এত বড় ভবন! গত ১৫ বছর সংসদ কার্যকর ছিল না। এখনো যদি নিম্ন আদালত সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পরিচালিত করতে পারি, আশা করি ভালো কিছু হবে।’
এর আগে,গত ২৫ আগস্ট সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১০ জন আবেদনকারীর পক্ষে মোহাম্মদ শিশির মনির রিট মামলাটি দায়ের করেন।
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত রয়েছে’। রিটে এ বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। রিটে আইন ও বিচার বিভাগের সুপ্রিম কোর্টের অধীনে সচিবালয়ের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিটে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক হবে না, এ মর্মে রুল জারির আবেদন জানানো হয়েছে। অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হয়, এ কারণে এই বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
রিটে আইন মন্ত্রণালায়ের লেজিসলেটিভ ও পার্লামেন্টারি এফেয়ার্স বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী এ রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনকারীরা হলেন- আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, মো. আসাদ উদ্দিন, মো. মুজাহিদুল ইসলাম, মো. জহিরুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, শাইখ মাহাদী, আবদুল্লাহ সাদিক, মো. মিজানুল হক, আমিনুল ইসলাম শাকিল এবং যায়েদ বিন আমজাদ।