বীরগঞ্জ-কাহারোল (দিনাজপুর) সংবাদদাতা : দিনাজপুরের বীরগঞ্জে দুই শিবিরকর্মী হত্যা মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম (৫০) ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেকসহ (৬৫) ৫ আওয়ামীলীগ নেতাকে গত রবিবার দিনাজপুর জেলা সিনিয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইব্রাহীম আলীর আদালতে দুই শিবিরকর্মী হত্যা মামলায় জামিন চাইতে গেলে জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।দিনাজপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আমিনুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
আটকৃত ৫ জন হলেন- বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুর ইসলাম (৫০), ৬ নং ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ আব্দুল খালেক (৬৫), আওয়ামী লীগের ৩ নং শতগ্রাম ইউপি’র সভাপতি মাস্টার গোলাম মোস্তফা (৫২), আলু ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম (৫৫) ও ৯নং সাতোর ইউ’পির সাবেক চেয়াম্যান বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রভাষক রেজাউল করিম শেখ (৪৮)।
মামলার সূত্রে জানা যায়- গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর বীরগঞ্জ উপজেলার ভগীরপাড়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী জহুরা বেগম শহীদ সালাহউদ্দীনের মা বাদী হয়ে দিনাজপুর নির্বাচনি আসন-১ (বীরগঞ্জ কাহারোল) তৎকালীন সংসদ সদস্য মনোরঞ্জনশীল গোপালসহ ২৭ জন আসামির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৯৯/১০০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং২১৮/২৪। মামলার অভিযোগে বলা হয় গত ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারী ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন দুপুরে ওই উপজেলার ভেলাপুকুর নামক স্থানে বাদী জহুরা বেগমের পুত্র সালাউদ্দিন (১৬) ও তার বন্ধু আসাদুল হককে (১৫) আসামি মনোরঞ্জনশীল গোপালের হুকুমে এজাহার নামীয় আসামীরা আটক করে। এরপর আসামীরা এজাহারকারীর পুত্র সালাউদ্দিন ও আসাদুলকে শিবির শিবির বলে চিৎকার করে তাদেরকে বেদম প্রহার করে। এক পর্যায়ে ওই দুজনকে মৃত্যু নিশ্চিত মনে করে রাস্তায় ফেলে রেখে আসামিরা চলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় আসাদুল ও সালাউদ্দিনকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন সন্ধ্যায় সালাউদ্দিন মারা যায় এবং পরদিন ৬ জানুয়ারী আসাদুলের মৃত্যু হয়।
এই দুজনের মৃত্যু ঘটনায় সে সময় দিনাজপুর কোতয়ালী থানা পৃথক দু’টি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
গত ২০১৪ সালের ৬ জানুয়ারী নিহত দুজন, আসাদুল ও সালাউদ্দিনের ময়নাতদন্ত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তাদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছিল।
এই দুজন শিবির কর্মীকে হত্যা ঘটনায় তৎকালীন সময়ে বীরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ কোন মামলা গ্রহণ করেনি।
দীর্ঘ কয়েক বছর পর দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে এজাহারকারী নিজে বাদী হয়ে গতবছরের ২৯ সেপ্টেম্বর আসামীদের বিরুদ্ধে বীরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
বীরগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আব্দুল গফুর জানান, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।মামলার এজাহার নামীয় আসামীরা মামলা দায়েরের পর থেকে পলাতক রয়েছে। বেশ কয়েকজন আসামীকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।