বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে পুনরায় লিভ টু আপিল শুনানির জন্য অনুমোদন দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আগামী ২২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির জন্য দিন ঠিক করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সার-সংক্ষেপ জমা দিতে বলা হয়েছে। রিভিউতে আপিলের অনুমতি দেয়ার ঘটনা এটিই প্রথম বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
গতকাল বুধবার রিভিউ আবেদনের শুনানিতে লিভ (আপিলের অনুমতি) মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে এ সংক্রান্ত বিষয়ে আদেশ দেন।
এটিএম আজহারের পক্ষে শুনানি করেছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী। সাথে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। , আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম শুনানিতে অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এছাড়াও এডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, এডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, ড. হেলাল উদ্দিনসহ শতাধিক আইনজীবী ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শুনানি শেষে ব্রিফিং এ ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী বলেছেন, আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ মামলার পুরো প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করেছি। রিভিউ আবেদনের শুনানিতে লিভ (আপিলের অনুমতি) মঞ্জুর করে আদেশ দেন। মৃত্যুদ-ের রিভিউ থেকে ফের আপিল শুনানি হবে- মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ক্ষেত্রে এটাই প্রথম নজির বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আবদুল কাদের মোল্লাকে যে রায়ের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে তা ভুল ছিল। সেটাকে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি। আদালত যদি আমাদের বক্তব্য গ্রহণ করেন তাহলে আবদুল কাদের মোল্লা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যত আসামীর সাজা হয়েছে, সে বিষয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে।
তিনি বলেন, ভুল প্রক্রিয়ায় সাজা হয়েছে কি না, সে বিষয়টি আমরা আলোচনায় নিয়ে আসতে পারবো এবং তা আদালতে উপস্থাপন করতে পারবো।
তিনি বলেন, আজ (বুধবার) চারটি গ্রাউন্ডে এটিএম আজহারুল ইসলামের রিভিউ অ্যাপ্লিকেশনটি এলাও (অনুমোদন) করে লিভ গ্রান্ট (মঞ্জুর) করেছেন আপিল বিভাগ। আগামী ২২ এপ্রিল মূল আপিলটির ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথম গ্রাউন্ড হচ্ছে- আপিল বিভাগ ২০১৯ সালে আদালত যে রায় দিয়েছিলেন, সেখানে ওনারা ইন্টারন্যাশনাল ল মানেননি। এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট-১৯৭৩ সালের আইনে ইন্টারন্যাশনাল ল অ্যাপ্লাই করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের আইনে ইন্টারন্যাশনাল ল কমপ্লাই করার কথা ছিল, কিন্তু সেটা তারা মানেননি। এই মূল গ্রাউন্ডে রিভিউ এলাও (অনুমোদন) হয়েছে।
দ্বিতীয় গ্রাউন্ড হচ্ছে- ওনারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট-১৯৭৩ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সেই আইনে স্পষ্ট বলা আছে, আন্তর্জাতিক আইন মেনে রায় দিতে হবে, কিন্তু ওনারা সেটা মানেননি এবং ওনারা যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটা আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে ছিল। এই গ্রাউন্ডেও রিভিউ অ্যাপ্লিকেশনটি এলাও হয়েছে।
তৃতীয়ত স্পেকচ্যুয়াল পয়েন্ট: মামলার সাক্ষী ঘটনার সময় আসামীকে অনেক দূর থেকে দেখেছেন, তিন কিলোমিটার দূর থেকে, পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে চিহ্নিত করেছেন, যা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব না।
চতুর্থ গ্রাউন্ড হলো এভিডেন্সগত বিষয়: একজন সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন এটিএম আজহারুল ইসলাম তার ক্লাসমেট ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি আজহারুল ইসলামের ক্লাসমেট ছিলেন না।
এটিএম আজহারুল ইসলামের একমাত্র পুত্র তাসনিম আজহার সুমন সাংবাদিকদের বলেন, বাবা অনেক অসুস্থ। তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। আমরা দ্রুত উনার মুক্তি চাই। আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যতদ্রুত সম্ভব উনাকে মুক্তি দেয়ার জন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বলেন, আমার বাবা এ মামলার ঘটনার সাথে ন্যূনতম কোন সর্ম্পক নেই। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে। ৫ আগস্ট স্বাধীনতার পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো উনাকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। অবিলম্বে উনাকে মুক্তি দেয়ার জন্য তিনি দাবি জানান।