আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনার এক বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল বুধবার। গত বছর চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় ইসকন কর্মীদের হামলায় নির্মম পিটুনি ও ধারালো অস্ত্রের কোপে প্রাণ হারান এই তরুণ আইনজীবী। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে তীব্র আলোচনার জন্ম দেওয়া এ হত্যাকাণ্ডে দায়ের হওয়া মামলাটির বিচার কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। দীর্ঘ এক বছরেও মামলার অগ্রগতি না থাকায় গভীর হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে দুপুরের আলোয় অসংখ্য মানুষের সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এক বছর পার হয়ে গেল, তবু এখনো ন্যায়বিচার পাইনি। আমি দ্রুত বিচার চাই। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে যেন দ্রুততম সময়ে বিচার সম্পন্ন করা হয়- সরকারের কাছে এ দাবি জানাচ্ছি। অনেক আসামী এখনও পলাতক। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না কেন? তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।’
চার্জশিটভুক্ত আসামীদের মধ্যে এখনো ১৮ জনের কোনো সন্ধান মেলেনি। আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বুধবার চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। সকালে চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দ্রুত বিচারের দাবি জানান আইনজীবীরা।
এসময় চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক এবং সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান আলী বক্তব্য দেন। বক্তারা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবি জানান এবং একবছরেও বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান তারা।
আলিফ হত্যা মামলার আইনজীবী রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, মামলার ৩৯ আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। এর মধ্যে ২১ জন গ্রেফতার হলেও ১৮ জন এখনো পলাতক রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই হত্যাকান্ড চট্টগ্রাম আদালত এবং জেলা আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে নজিরবিহীন। আগামী ১ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত আছে। পলাতকদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। পরোয়ানা কার্যকর করে ‘পি অ্যান্ড এ’ রিপোর্ট দাখিলের পর পলাতকদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিধান রয়েছে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই মামলাটি বিচার পর্যায়ে অগ্রসর হবে।
আসামীর তালিকায় রয়েছেন—চিন্ময় কৃষ্ণ দাস (চন্দন কুমার ধর), চন্দন দাস মেথর, রিপন দাস, রাজীব ভট্টাচার্য্য, শুভ কান্তি দাস, আমান দাস, বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত প্রকাশ দাস, রুমিত দাস, নয়ন দাস, ওমকার দাস, বিশাল, লালা দাস, সামীর, সোহেল দাশ রানা, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাস, পপি, অজয়, দেবীচরণ, দেব, জয়, লালা মেথর, দুর্লভ দাস, সুমিত দাস, সনু দাস, সকু দাস, ভাজন, আশিক, শাহিত, শিবা দাস, দ্বীপ দাস ও সুকান্ত দত্ত।
২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সনাতন ধর্মের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হলে তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তার অনুসারীরা চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ওই হামলার মধ্যেই আদালত ভবনের প্রবেশপথের সামনে অ্যাডভোকেট আলিফকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।