১৯৮৫ সালে ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তা থাকার সময় ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। সেই মামলার একজন ৮০ বছর বয়সী হরেন্দ্র নাথ চন্দ্র। দীর্ঘ ৪০ বছর আইনি লড়াই শেষে সেই মামলায় ভারমুক্ত হলেন এই বৃদ্ধ। সব আদালতের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগেও রায় তার পক্ষে গেছে। এদিন রিভিউ খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের আপিল বিভাগ। এর ফলে খরচ (কস্ট) হিসেবে ৩ মাসের মধ্যে সোনালী ব্যাংককে হরেন্দ্র নাথকে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে। আদালতে হরেন্দ্র নাথ চন্দ্রের পক্ষে (বিনামূল্যে সরকারি আইনি সেবায় নিযুক্ত) শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। গত ৯ ডিসেম্বর এই মামলায় আপিল বিভাগ একই রায় দিয়েছিলেন, কিন্তু এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করেছিল সোনালী ব্যাংক।

ব্যারিস্টার ওমর ফারুক জানান, ৮০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ আজ ভারমুক্ত হলেন। ১৯৮৫ সালের একটি ঘটনায় তিনি জেলও খেটেছেন। এরপর সব আদালতেই তিনি জয়ী হয়েছেন। তবে প্রতিটি ধাপেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপিল করেছে। আপিল বিভাগে সর্বশেষ আপিলেও জয়ী হন হরেন্দ্র নাথ। তিনি বলেন, আমাদের আর্জিতে আদালত ৩ মাসের মধ্যে ২০ লাখ টাকা খরচ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

এই আইনজীবীর তথ্য মতে, হরেন্দ্র নাথ চন্দ্র কুষ্টিয়ার খোকসার হেলালপুর গ্রামের বাসিন্দা। বিএ পাস করে ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক পদে সোনালী ব্যাংকের ঢাকার একটি শাখায় যোগদান করেন তিনি। ৩ বছর পর পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক হন। এরপর তাকে যাত্রাবাড়ী শাখায় বদলি করা হয়।

তিনি চাকরিরত অবস্থায় রেমিট্যান্স সংক্রান্ত ১৬ লাখ ১৬ হাজার ১০০ টাকা যাত্রাবাড়ী শাখা থেকে লোকাল অফিসে স্থানান্তর করা হয়। সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা সিল-স্বাক্ষরসহ লিখিতভাবে সমুদয় অর্থ বুঝে নেন। তবে এর কিছুদিন পর ১৯৮৫ সালে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে ওই টাকা পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে তহবিল তছরুপের অভিযোগে ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে হরেন্দ্রসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপর ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে তাদের সবাইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে গ্রাহকের টাকা জমা না দেয়ার অপর একটি মামলায় ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাবেক এই ব্যাংক কর্মকর্তাকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। একপর্যায়ে ১৯৯০ সালে হরেন্দ্র নাথ জেল খেটে বের হন। এর আগে ১৯৮৫ সালের ২৯ জুলাই হরেন্দ্র নাথসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকার বিশেষ আদালতে ফৌজদারি মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। বিচারে ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর হরেন্দ্র নাথসহ সবাই বেকসুর খালাস পান।