রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে পেতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর করা আপিলের রায় ঘোষণার জন্য আজ রোববার দিন ঠিক করা হয়েছে। এ দিন কার্যতালিকার এক নম্বর ক্রমিকে রায়ের জন্য রাখা হয়েছে মামলাটি।
সুপ্রিম কোর্টের রোববারের জন্য প্রকাশিত কার্যতালিকায় মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চে রয়েছে।
গত ১৪ মে এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১ জুন দিন ধার্য করা হয়েছিল। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক এবং আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
আদালতে জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন ও ব্যারিস্টার আরমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, এডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিনসহ শতাধিক আইনজীবী।
আদালত কক্ষে জামায়াত নেতাদের পক্ষে দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমীর মো. সেলিম উদ্দিন, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল। সকল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এবং সংসদীয় রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী এই দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত যে কয়টা সঠিকভাবে সংসদ নির্বাচন হয়েছে সব নির্বাচনেই জামায়াতে ইসলামী জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছে। এমনকি সরকারেও অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো ২০০৮ সালে জামায়াতকে ইলেকশন কমিশন একটি নিবন্ধন ইস্যু করেন কিন্তু বাংলাদেশের হাইকোর্ট মেজরিটির জাজমেন্টের ভিত্তিতে এই নিবন্ধনটি বাতিল করেন। এর বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছিলাম। আপিল মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানি অন্তে আগামী পহেলা জুন ২০২৫ এই মামলার রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ১২ মার্চ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল শুনানি শুরু হয়।
গত বছরের ২২ অক্টোবর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ। এর ফলে নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরে জামায়াতের আইনি লড়াই করার পথ খুলল যায়। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করার আবেদনের শুনানির জন্য এদিন ধার্য করা হয়।
আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত এ দিন ধার্য করেন। এর আগে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে খারিজ হওয়া আপিলটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
এক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াতে ইসলামী। তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানিতে জামায়াতের মূল আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় গত বছরের নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ বলে আপিল খারিজের আদেশ দেন। ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল থাকে।