আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন, অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অব জুডিশিয়াল রয়েছে। কিন্তু জাজদের অ্যাকাউন্টিবিলিটির কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা পড়ে আছে, আমরা বিচার করতে পারছি না। জনগুরুত্বপূর্ণ মামলা রেখে সরকারের অথরিটি পালন করছেন। তাদের একটা সিস্টেমের মধ্যে আসতে হবে। বিচারের নামে স্বাধীনতা মানে তো আপনি যা খুশি তা করবেন, এটার নাম স্বাধীনতা নয়। জুডিশিয়াল কাউন্সিলেরও যদি কেউ অফেন্স (অপরাধ) করে তাদেরও জবাবদিহিতা বা বিচারের আওতায় আনার একটা সিস্টেম থাকতে হবে।
গতকাল রোববার মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলার যুক্তিতর্কের শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার এই মত দেন।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর তিন সদস্যের উপস্থিতিতে সকালে এই মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হয়। অপর দুই বিচারক হলেন মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। দিনের শুরুতে ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তাজুল ইসলাম সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার বলেন, অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অব জুডিশিয়াল রয়েছে। কিন্তু জাজদের অ্যাকাউন্টিবিলিটির কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা পড়ে আছে, আমরা বিচার করতে পারছি না। জনগুরুত্বপূর্ণ মামলা রেখে সরকারের অথরিটি পালন করছেন। তাদের একটা সিস্টেমের মধ্যে আসতে হবে। বিচারের নামে স্বাধীনতা মানে তো আপনি যা খুশি তা করবেন। এটার নাম স্বাধীনতা না। জুডিশিয়াল কাউন্সিলেরও যদি কেউ অফেন্স (অপরাধ) করে তাদেরও জবাবদিহিতা বা বিচারের আওতায় আনার একটা সিস্টেম থাকতে হবে।
পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, চেয়ারম্যান নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এসব বলেছেন। বিগত সরকারের সময় বিচারের নামে বিচারকরা স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা আজ সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের প্রতারণার কথা তুলে ধরেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের সময় যে জাজমেন্ট প্রথমে ওপেন কোর্টে দেওয়া হয়েছিল, পরে চূড়ান্ত রায়ের সময় সেই রায়ের অংশটুকু বাতিল করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তিনি। প্রধান বিচারপতির মতো আসনে অধিষ্ঠিত থেকে খায়রুল হক এই স্বেচ্ছাচারী কাজ করেছেন।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এই বিচারকরা গুরুত্বপূর্ণ মামলা ফেলে রেখে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী অগুরুত্বপূর্ণ মামলাকে বিচারের জন্য নিয়ে আসতেন। কাউকে ফাঁসি দেওয়ার প্রয়োজনে সেই মামলাকে আগে নিয়ে আসা, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অন্য মামলাকে পেছনে ফেলে দেওয়া এই বিচারকদের স্বেচ্ছাচারিতা। এটা রোধ করতে সাংবিধানিক অথবা আইনি ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের কাছেও তিনি অভিমত পাঠিয়েছিলেন। আমরা যখন সাবমিশন (দাখিল) রাখছিলাম যে বিচার ব্যবস্থাকে এভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল এবং বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করেই বাংলাদেশের স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল, তখন তিনি এই কথাটা বলেছেন যে, এই বিচারপতিদের অথবা বিচারকদের ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট বিধান থাকা উচিত। যেন ভবিষ্যতে তারা আর কখনো এমন হতে না পারেন।