* পুরস্কারসহ অক্সিলিয়ারি ফোর্সে নিয়োগ পাচ্ছেন ডাকাত ধরা ৫ শ্রমিক
রাজধানীর ধানমন্ডিতে র্যাবের পোশাক পরে কথিত অভিযানের নামে ডাকাতির চেষ্টায় আটক হওয়া ডাকাত দলটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মতোই প্রস্তুতি ছিল। গত বুধবার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কের এম এ হান্নান আজাদ নামে ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাসায় ডাকাতির সময় ডাকাতদলের কাছে র্যাবের পোশাকের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেট, সোর্স হিসেবে ছাত্র প্রতিনিধি এবং বুম হাতে পরিচয় দেয়া ভুয়া মিডিয়ার লোকও ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিএমপি রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম। তিনি আরও বলেন, ডাকাতির ঘটনায় চারজনকে আটকের পুরস্কার পাচ্ছেন পাঁচ শ্রমিক। সাহসিকতার জন্য সেই পাঁচ শ্রমিককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে ডিএমপি।
ডিসি মাসুদ আলম বলেন, ওই সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রে ২৫-৩০ জন ছিল। অপারেশন পরিচালনার জন্য পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে ধরনের প্রিপারেশন নিয়ে যায়, ঠিক সেই ধরনের ফুল প্রিপারেশন তাদের ছিল। তাদের সঙ্গে র্যাবের কটি পরা এবং জ্যাকেট পরা অবস্থায় লোকজন ছিল। সঙ্গে মাইক্রোফোন হাতে মিডিয়ার লোক ছিল। যারা সোর্স হিসেবে কাজ করে ৫-৬ ছাত্র প্রতিনিধি ছিল। ডাকাতির শিকার ওই বাড়িটি ‘অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স’ এর মালিক এম এ হান্নান আজাদের নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর। বসুন্ধরায় দোকানের পাশাপাশি তাঁতীবাজারে কারখানা রয়েছে তার।
ডিসি বলেন, ধানমন্ডি ৮ নম্বর রোডের ওই বাড়িটির নিচতলায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস আছে। এ ছাড়া ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে। বুধবার ভোর পাঁচটার দিকে ডাকাত দলটি তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকারে ওই বাসার সামনে এসে গেটে নিরাপত্তা কর্মীদের বলে, তারা র্যাবের লোক, তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তারা বাড়িতে অভিযান চালাবে বলে তাড়াতাড়ি গেট খুলতে বলে। তাদের কয়েকজনের গায়ে র্যাব লেখা কটি পরা ছিল। সে সময় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। তখন অভিযুক্ত ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালাগালি করতে থাকে এবং গেট না খুললে তাদের হত্যার হুমকি দেয়। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন গেটের ওপর দিয়ে উঠে জোর করে গেট খুলে ফেলে। এরপর তারা সবাই জোর করে বাড়িতে ঢুকে সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ারটেকার ও গাড়ি চালককে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে।
ব্যবসায়ীর বাসায় স্বর্ণ থাকতে পারে ধারণা করে ডাকাত দলটির টার্গেট ওই বাসা থাকলেও তারা নিচতলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস থেকেই ‘তল্লাশির’ নামে লুটপাট শুরু করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিচতলার অফিসের গেট ভেঙে পিয়নকে মারধর করে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর ডাকাতরা তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে ফেলে। এ সময় গেট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিনজন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসেন। ডাকাতরা তখন তাদেরও আটক করে মারধর করে অফিসের চাবি ও বাসার চাবি দিতে বলে। এরপর তারা চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে নেয় ও অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তাদের আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসে ঢুকে আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়।’
সবশেষে বাড়ির মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাসা থেকে দেড়লাখ টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক আড়াই ভরি স্বর্ণ লুট করে নেয়। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নামিয়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে। এসবের মধ্যে কেউ একজন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে খবর দিলে নিকটস্থ পুলিশের টহল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তাৎক্ষণিকভাবে ডাকাত দলের লোকজন পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ডাকাত দলের সদস্যদের হাতাহাতিও হয়, এতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হন। তখন আশপাশে থাকা লোকজনের সহায়তায় পুলিশ ফরহাদ বীন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩), ওয়াকিল মাহমুদসহ (২৬) মোট চারজনকে আটক করে। ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। পরে ওই ব্যবসায়ীর ভাগ্নে তৌহিদুল ইসলামের করা একটি মামলায় চারজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গ্রেফতার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পরিপ্রেক্ষিতে রাতে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি গাড়িসহ আবদুল্লাহ ও সুমন নামে আরো দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। ডিসি মাসুদ আলম বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ছয় জনের বাইরে যারা আছে শিগগিরই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো বলে আশা করছি। তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, রিমান্ডে এনে এসব তথ্য ক্রসচেক করব। যেহেতু ২৫-৩০ জনের মতো একটা টিম কাজ করেছে, তাই বাকিদের গ্রেফতারের সুবিধার্থে কিছু তথ্য আমরা পরে ডিসক্লোজ করতে চাচ্ছি। এ সময় ডিএমপি’র গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘যাদের সহায়তায় ঘটনাস্থলে চার ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে এমন পাঁচ জনকে আর্থিক পুরস্কার দেয়াসহ ‘অক্সিলারি ফোর্স’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।