স্টাফ রিপোর্টার : সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে একমাসের আল্টিমেটাম দিয়েছে বিএনপি। গতকাল শনিবার দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ হুঁশিয়ারিও দিয়ে বলেন, পরিষ্কার শুনে রাখুন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, এই মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রদান না করেন তাহলে আমরা রাজনৈতিকভাবে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো বসে আমাদেরকে পুনরায় নির্ধারণ করতে হবে আমরা কোন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এগুবো। এসময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির ‘সেকেন্ড রিপাবলিক এবং গণপরিষদ নির্বাচন’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। গতকাল শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্যতম লক্ষ্য সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠায় গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন, এটা তাদের অন্যতম লক্ষ্য বলেছে। আমি সমালোচনা করতে চাই না। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই তার নিজস্ব কর্মপন্থা থাকবে, আদর্শ থাকবে, গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্রে এরকম ঘোষণা থাকে। কেউ সমাজতন্ত্র চায়, কেউ অন্য কিছু চায়, কেউ হয়ত ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এরকম অনেক কিছু থাকে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রে। আমি নতুন বন্ধুদের বলতে চাই, সেকেন্ড রিপাবলিক আমাদের বর্তমান রিপাবলিক কি অসুস্থ হয়ে গেছে? সেকেন্ড রিপাবলিক কখন হয়? রিপাবলিকের রিটারেল মানে কি? রিপাবলিক হচ্ছে যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তাদের একটা নমিন্যাল অথবা ইলেক্টেড হেড দি স্টেট থাকবে। সেটা কি আমাদের নেই?
গণপরিষদ দাবি, অন্য মতলব আছে মন্তব্য করে সালাহ উদ্দিন বলেন, গণপরিষদ কেনো হবে? এর মধ্যে তো আরও একটি উদ্দেশ্য আছে? যারা গণপরিষদের বিষয় সামনে আনছে যারা সেকেন্ড রিপাবলিকের বিষয় সামনে আনছে হয় তারা বুঝে না অথবা বুঝে আমাদের এই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আরো দীর্ঘায়িত অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র আছে।
তিনি বলেন, যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছে আমি সব সময় শুনি মাঠে-ঘাটে, বিফর দ্যা পার্লামেন্ট ইলেকশন তাদের একটি মতলব আছে। কারণ ৫ আগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থান কি মেম্বার-চেয়ারম্যান ইলেকশনের জন্য হয়েছিলো? দেশের পৌরসভা, উপজেলা চেয়ারম্যানদের নির্বাচনের জন্য কি ৫ আগস্ট হয়েছিলো? তাহলে তারা কেনো শুধু মেম্বার-চেয়ারম্যান ইলেকশনের জন্য এই দাবি তুলেছে। একটা বিষয় আছে, সেটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উত্তরণের পথটা যত দীর্ঘায়িত হওয়া যায় ততই বোধহয় তাদের লাভ। কারো ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হবে আর কারো কারো মনোবাসনা পূর্ণ হবে।
রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে ‘ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন(এনআরএফ)’ এর উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ত্যাগ ও নেতৃত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং সৈয়দ আবদাল আহমেদে সম্পাদিত ‘নন্দিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) নেতৃত্বে হয়েছে, আমরা যাবো, একবার গিয়েছি। সেটা চলতে থাকবে। এই কাজ তো বন্ধ হবে না। সংস্কার, ৩১ দফা আমরা প্রদান করেছি ২০২৩ সালে বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই সংস্কারের সাথে আপনাদের সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বেশি অমিল নাই। কিন্তু যে সমস্ত বিষয় অমিল আছে সেগুলো নিয়ে কথা বলব। বাট তাতে আপনি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হবে সেটা তো মনে হয় না। যদি আপনারা কাউকে সময় দিতে চান, কাউকে অর্গানাইজ হতে দিতে চান বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে সেটা অন্য কথা।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যকে টিকিয়ে রাখতে হবে উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন বলেন, যারা সেকেন্ড রিপাবলিকের ঘোষণাপত্র তাদের দলীয় ঘোষণাপত্রে রেখেছেন সেটা ওখানে থাক। যারা গণপরিষদের মধ্যে দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে চান সেটা আপনারা যখন পারবেন করবেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে আর যাতে কোনো বিলম্ব না হয় সেজন্য আমরা যাতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখি এটাই আমাদের আহ্বান। যেকোনো মূল্যে রাজপথে গড়ে উঠা ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং এনআরএফ এর সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, স্বেচছাসেবক বিষয়ক সহ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিউল বারী বাবুর সহধর্মিণী বিথীকা বিনতে হোসাইন, এনআরএফের আহ্বায়ক ও ‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া’ গ্রন্থের লেখক সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।