রাজধানী
ডিইউজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
যায়যায়দিন দখলমুক্ত ও ডিক্লারেশন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি
সন্ত্রাসীদের দিয়ে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল প্রধান কার্যালয় দখল এবং ঠুনকো অজুহাতে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের অভিযোগ তুলেছে যায়যায়দিন কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাজী রুকুনউদ্দীন আহমেদ এ অভিযোগ তুলেন।
Printed Edition
সন্ত্রাসীদের দিয়ে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল প্রধান কার্যালয় দখল এবং ঠুনকো অজুহাতে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের অভিযোগ তুলেছে যায়যায়দিন কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাজী রুকুনউদ্দীন আহমেদ এ অভিযোগ তুলেন। তিনি অবিলম্বে যায়যায়দিন অবৈধ দখলমুক্ত এবং পত্রিকার ডিক্লারেশন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে সামনে রেখে একটি চক্র সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর দৈনিক যায়যায়দিনের প্রধান কার্যালয় দখল করে। তারা সেখান থেকে অবৈধভাবে দৈনিক যায়যায়দিনের মূল লোগোর সঙ্গে হুবহু মিল রেখে ‘দৈনিক যায়যায়দিন প্রতিদিন’ নামের একটি পত্রিকা প্রকাশ করছে; যা আইনগতভাবে অবৈধ।
সম্মেলনে জানানো হয়, ২০০৭ সালে আর্থিক সংকটে পড়ে শফিক রেহমান দৈনিক যায়যায়দিন পাবলিকেসন্স-এর শেয়ার এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ হোসেন চৌধুরীর কাছে বিক্রি করেন। ২০০৭ সালের ২৩ মার্চ ফরম-১১৭ এর মাধ্যমে শফিক রেহমান, তার স্ত্রী তালেয়া রহমান এবং ছেলে সুমিত রহমান তাদের যায়যায়দিন পাবলিকেসন্সের সব শেয়ার সাঈদ হোসেন চৌধুরী ও আবুল হাসান মো. আল ফারুক বরবার হস্তান্তর করেন। এর দুইদিন পর অর্থাৎ ২৫ মার্চ ২০০৭ তারিখ শফিক রেহমান ও তালেয়া রেহমান ফরম-১১৭ এর মাধ্যমে তাদের যায়যায়দিন প্রিন্টার্সের শেয়ার এইচআরসি মিডিয়া লিমিটেড এবং এইচআরসি বাংলাদেশ লিমিটেডের নামে হস্তান্তর করেন। শেয়ার হস্তান্তরসহ সব প্রক্রিয়া শেষে শফিক রেহমান ২০০৭ সালের ১৭ জুলাই অতিরিক্ত ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে উপস্থিত হয়ে যায়যায়দিনের প্রকাশকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে উপস্থিত হয়ে আবুল হাসান মো. আল-ফারুক যায়যায়দিনের প্রকাশকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ২০১১ সালের ৯ জুন পত্রিকার প্রকাশকের পদত্যাগের ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে প্রকাশকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদ হোসেন চৌধুরী যায়যায়দিনের প্রকাশক ও মুদ্রাকরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই সময় থেকে সাঈদ হোসেন চৌধুরী দৈনিক যায়যায়দিনের প্রকাশক ও মুদ্রাকর হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরও জানানো হয়, শফিক রেহমান ২০০৭ সালের ১৭ জুলাই দৈনিক ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার প্রকাশকের দায়িত্বভার থেকে পদত্যাগ করলেও ২০০৮ সালের ৬ মে পর্যন্ত বেতনভুক্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ৫ মে তিনি স্বেছায় সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ৬ মে ২০০৮ইং তারিখের যায়যায়দিন ও সমকালসহ একাধিক জাতীয় দৈনিকেও এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ পায়। শফিক রেহমান পদত্যাগ করার পর শহীদুল হক খান এবং পরে বরুণ শংকর দৈনিক যায়যায়দিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুমতিক্রমে ২০০৮ সালের ২৩ নভেম্বর কাজী রুকুনউদ্দীন আহমেদ যায়যায়দিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। উল্লেখিত সময় থেকে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাঈদ হোসেন চৌধুরীর মালিকানাধীন দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকাটি দখল করে নিতে বেশকিছু দুস্কৃতিকারী পত্রিকার প্রধান কার্যালয় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এইচআরসি মিডিয়া ভবনে কয়েক দফা হামলা চালায়। এ ব্যাপারে গত ২৪ অক্টোবর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়। গত ১৫ ডিসেম্বর সাংবাদিক শফিক রেহমানকে সামনে রেখে ওই চক্র সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের দৈনিক যায়যায়দিনের প্রধান কার্যালয় দখল করে নেয়।
এদিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল যায়যায়দিন কার্যালয় ও প্রেস বেদখল হওয়ার পর বিধি মোতাবেক ডিসি অফিসকে অবহিত করে অন্য প্রেস থেকে যায়যায়দিন পত্রিকা ছাপানোর ব্যবস্থা করা হয়। পর পর দু’টি প্রেস পরিবর্তনের বিষয়টিও যথারীতি ডিসি অফিসকে জানানো হয়। কিš‘ ডিসি অফিস শফিক রহমানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঠুনকো অজুহাতে ১০ ফেব্রুয়ারি যায়যায়দিন পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করে। অথচ এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি সাঈদ হোসেন চৌধুরীর এক রীট পিটিশনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার সবকিছুই সাঈদ হোসেন চৌধুরীর পক্ষে থাকবে বলে তিন মাসের ‘স্থিতিবস্থা দেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এজিএম (প্রশাসন) গোলাম ফারুক আলম, সিনিয়র ম্যানেজার নূরুল হক ও ডেপুটি ম্যানেজার (প্রশাসন) ইকবাল হোসেন।
ডিইউজের নিন্দা ও প্রতিবাদ : যায়যায়দিন পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। গতকাল ডিইউজে সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম এক বিবৃতিতে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, যায়যায়দিনের ডিক্লারেশন বাতিলের মধ্যদিয়ে গণমাধ্যমের দুশমন বিগত ফ্যাসিস্টের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। তারা বলেন, ডিইউজে সবসময় সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তাই সংবাদপত্র বিরোধী বা এর প্রকাশনা বন্ধের মতো কোনো নিষ্ঠুর তৎপরতাকে ইউনিয়ন বরদাশত করে না। বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার প্রধানসহ উপদেষ্টারা একদিকে বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো পত্রিকা বন্ধ বা গণমাধ্যমের ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করবে না। অন্যদিকে বিশেষ মহলকে সন্তুষ্ট করার জন্য ন্যক্কারজনকভাবে পবিত্র রমজান মাসে ঈদের পূর্ব মুহূর্তে যায়যায়দিন পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিল করে কয়েকশ’ সাংবাদিক-কর্মচারীর জীবন জীবিকাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। সরকারের এহেন অমানবিক কর্মকাণ্ড ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকেও হার মানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, যায়যায়দিন পত্রিকার প্রধান কার্যালয় বেদখল হওয়ার পর জেলা প্রশাসন কার্যালয়কে অবহিত করে প্রেস পরিবর্তন করা হয় এবং যথারীতি পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখা হয়। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের শরণাপণ্ন হলে আদালত তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। কিন্তু জেলা প্রশাসন উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করার মতো চরম দৃষ্টতা দেখিয়েছে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন অবিলম্বে যায়যায়দিন পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানায়। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।