মুহাম্মদ নূরে আলম : ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দেশের ইতিহাসের কিংবদন্তীতুল্য আখ্যান। জুলাই বিপ্লবে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে মাদ্রাসা ছাত্ররা। জুলাই বিপ্লবে আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের একটি বীরোচিত ভূমিকা ছিল। এই বিপ্লবে আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসার ছাত্ররা সমাজের বিভিন্ন পেশার জনগণকে সাথে নিয়ে এই যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, গাজীপুরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বাহিনীর বিরুদ্ধে এক অপ্রতিরোধ্য শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এতে খুনি হাসিনার পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল। দেড় হাজারের অধিক নিহত এবং ৩০/৪০ হাজারের অধিক আহত ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশে সৃজিত হয়েছে নতুন ইতিহাস। যুগান্তকারী এই ইতিহাস বিনির্মাণে অংশ নিয়েছে জাতি-ধর্ম-শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে আলেম-উলামা এবং মাদরাসা শিক্ষার্থীরাও। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আলেম সমাজের অংশগ্রহণ এবং বিপ্লবী ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। সেই এতিহাসিক ভূমিকা রাখতে গিয়ে ১৪জন কুরআনে হাফেজসহ শতাধিক মাদ্রাসার ছাত্র ও আলেম শহীদ হন। তাদেরই একজন গাজীপুরের শ্রীপুরে জুলাই বিপ্লবে শহীদ হাফেজ শফিকুল ইসলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষকালে এই এলাকায় আরও ১৭ জন ছাত্র-জনতা শহীদ হয়।
এই তরুণ মাদ্রাসার ছাত্রদের আত্মত্যাগে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে জালিমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের বিজয় হয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, উত্তরা, গাজীপুর, সাভার এলাকা ছিল পুরোদস্তুর রণক্ষেত্র। সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার সঙ্গে রাজপথে নেমে এসেছিল আলেম সমাজও। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানেও শতাধিক আলেম ও মাদরাসা শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছেন, অঙ্গ হারিয়েছেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে জুমার খুতবা দেওয়ায় চাকরি হারিয়েছেন। ২৪-এর আন্দোলন ছিল যুগপৎ রাজপথে এবং অনলাইনে। আলেম সমাজ যেভাবে রাজপথ রক্তে রঙিন করেছেন, তেমনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারও লাল করে সংহতি প্রকাশ করেন।
শহীদ হাফেজ শরিফুল ইসলামের পিতার আর্তনাদ: ৫ আগস্ট ২০২৪ সোমবার পুলিশের গুলীতে নিহত হয়েছে হাফেজ শরিফুল। জুলাই বিপ্লব চলাকালে গাজীপুরে খুব কাছ থেকে নির্বিচারে গুলী করে পুলিশ হত্যা করে হাফেজ শরিফুল ইসলামকে। রাষ্ট্র পারবে না শরিফুলকে ফিরিয়ে দিতে! তার বাবা-মা জাতির কাছে তাদের সন্তান হত্যার বিচারের দাবি জানিয়েছেন। জুলাই অভ্যুথানের সকল শহীদের আত্মত্যাগ প্রতীয়মান হয় ফ্যাসিস্ট জালিমদের বিরুদ্ধে এদেশের আলেমরা বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিতে পারে।
শ্রীপুরে শহীদ হাফেজ শরিফুলের পিতাকে দিয়ে চালু করা হলো সংস্কারকৃত পুলিশ বক্স: গাজীপুরের শ্রীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলীতে শহীদ হওয়া হাফেজ শরিফুল ইসলামের পিতা শুকুর আলীকে দিয়ে চালু করা হলো আন্দোলনের সময় পুড়িয়ে দেওয়া পুনঃসংস্কারকৃত পুলিশ বক্স। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশ বক্সটি পুনঃসংস্কারের ব্যয় বহনকারী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু।
১৭ আগস্ট ২০২৪ শনিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে এ পুলিশ বক্সটি চালু করার সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আমিনুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শ্রীপুর উপজেলার সমন্বয়কারীগণ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় পুড়িয়ে দেয়া এই পুলিশ বক্সটি পুনঃসংস্কারে অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলামের আর্থিক সহযোগিতায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-ছাত্রীরা শৈল্পিক আল্পনায় রাঙ্গিয়ে পুলিশ বক্সটির ভিতর এবং বাইর আকর্ষণীয় করে তুলেন।
গাজীপুরের শ্রীপুরে ৮ শহীদ পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে দিয়েছেন জামায়াত: গাজীপুরের শ্রীপুরে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বিগত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৮ শহীদ পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে নগদ অর্থ প্রদান করেছেন। রোববার ২৫ আগস্ট ২০২৪ বিকেলে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা বেগম আয়েশা অডিটোরিয়ামে এবার এ টাকা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ অর্থ প্রদান করেন। উল্লেখ্য, এ আন্দোলনে শ্রীপুর এলাকায় শহীদ হওয়া হাফেজ শরিফুল, জাহাঙ্গীর আলম, সবুজ মিয়া, সিফাত উল্লাহ, কাওসার, আবু সুফিয়ান, রতন মিয়া ও আব্দুর রহমানের পরিবারকে এ অর্থ প্রদান করা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ছাত্র জনতার এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ভাইদের রক্তের বিনিময়ে এই জালিম সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ছাত্র জনতার ত্যাগের কারণে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা পেয়েছে। এই স্বাধীনতা যাতে অক্ষুণ্ন রাখা যায় সেজন্য সকলকে সোচ্চার থাকতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুরের জেলা আমীর জাহাঙ্গীর আলম, সেক্রেটারি শফিউদ্দিন আহমেদ, শ্রীপুর উপজেলা আমীর মাওলানা নূরুল ইসলাম, জেলা প্রচার সেক্রেটারি মুস্তাফিজুর রহমান, শ্রীপুর পৌর আমীর মাওলানা জাহাঙ্গীর কবির।