রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন এবং খাদ্য সংকট সমাধান
ক্রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে সহযোগিতা
সংস্কারে টেকনিক্যাল সহযোগিতা
ইবরাহীম খলিল : এমন একটা সময়ে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস বাংলাদেশে সফরে এলেন; যখন মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা ১০/১২ লাখ রোহিঙ্গার খাদ্যের সংকট দেখা দেওয়ার উপক্রম হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কমে যাওয়ার কারণে মূলত এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে জুলাই বিপ্লবের পর দেশের সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে টালমাটাল অবস্থা।
৪ দিনের সফরে বাংলাদেশে এসে জাতিসংঘের মহাসচিব দুইদিনের পুরোটা সময় চরম ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে পার করেছেন। মোটা দাগে বলতে গেলে অ্যান্তেনিও গুতেরেসের কাছ থেকে তিনটি বিষয়ে আশ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে একটি হলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং তাদের খাদ্য সংকটের সুরাহা, সংস্কার এবং সংলাপে সহযোগিতা।
অ্যান্তেনিও গুতেরেসের প্রথম দিন পুরোটা সময়জুড়ে কক্সবাজারের উখিয়াতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক কর্মসূচির ব্যস্ততার মধ্যে ছিলেন। তিনি নিজচোখে রোহিঙ্গাদের জীবন চিত্র অবলোকন করার পাশাপাশি তাদেরকে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। পাশাপাশি তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করার কথা দিয়েছেন। সেইসাথে তাদের প্রত্যাবাসনটা যেন নিরাপদ হয় সেদিকেও খেয়াল রাখার ব্যাপারে কথা বলেছেন। তার প্রথম দিনের সফর ও কর্মসূচি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই সফরে জাতিসংঘ মহাসচিবের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গাদের প্রতি তার সমর্থন ও সহমর্মিতা জানানো। তিনি তাদের সাথে সংহতি জানিয়ে ইফতার করেছেন প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সাথে। তাই সফরের শেষে সংবাদ সম্মেলনে মি. গুতেরেস রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা জবাবও দিয়েছেন।
দ্বিতীয় দিনে এসে ঢাকাতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে অংশ নেন গুতেরেস। ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলের সাথে গোলটেবিল বৈঠকসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচিতে যোগ দেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত করতে চাই যে, শান্তি বজায় রাখতে জাতিসংঘকে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের এক নম্বর সহযোগী হিসেবে গণ্য করতে পারেন আপনারা। আমরা সবার জন্য একটি ন্যায্য এবং টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে মি. গুতেরেস বলেছেন, নতুন বাংলাদেশে সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার, সেখানে প্রধান সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত আছে জাতিসংঘ। আন্তেনিও গুতেরেসের বক্তব্যে মূলত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কথার প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি বলেছেন, সংস্কারে কোথাও কোন প্রয়োজন মনে হলে জাতিসংঘ তাতে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
গোলটেবিল বৈঠকে সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যু গুরুত্ব পায়। রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য এখানে খুব গুরুত্বের দাবি রাখে। জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু তা দ্রুত শেষ করে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে বলেছি আমরা। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, তাদের দল সংস্কার, সুষ্ঠু নির্বাচন ও জাতীয় ঐক্য নিয়ে কথা বলেছে।
বৈঠকে যোগ দেয় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বৈঠক শেষে বলেছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষে আমাদের সংস্কার বিষয়ে যে অবস্থান, আমরা মনে করি, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে, বিচার ও সংস্কার অন্যতম কমিটমেন্ট জনগণের কাছে।
জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে বৈঠকের পর রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে একধরনের মতপার্থক্য ফুটে উঠেছে। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাদের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটেছে অ্যান্তেনিও গুতেরেসের সমাপনী প্রেস ব্রিফিংয়ে। তিনি বলেছেন, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে জাতিসংঘ সবধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
সংস্কার এবং সংলাপে জাতিসংঘ মহাসচিবের সহযোগিতার আশ্বাসের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, সংলাপ সংস্কারের কাজ আমাদের দেশের কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞরা করছেন। তবে আমাদের বিদেশী যারা পার্টনার আছে, তারা আমাদের সমর্থন দিচ্ছেন। সেই জিনিসগুলো দ্ব্যর্থ কন্ঠে জানান দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সাপোর্ট লাগতে পারে। তারা সেগুলোর কথাও বলেছেন। তাদের এই সাপোর্টগুলো আমরা নিবো কি-না সেটা আমরা এখনো বলিনি।