টাইম ম্যাগাজিন প্রতিবছর বিশ্বের ১০০টি স্থাপনাকে ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট প্লেসেস’ হিসেবে ঘোষণা করে থাকে। এ বছর সেই তালিকায় প্রথমবারের মতো স্থান পেয়েছে আশুলিয়ার জামগড়ার দরগার পাড় এলাকার জেবুন নেসা মসজিদ।
গত ১৩ মার্চ প্রকাশিত এ তালিকার প্রতিবেদনে মসজিদটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্থপতিরা দীর্ঘদিন ধরে অত্যাধুনিক মসজিদ ডিজাইন করে আসছেন, কিন্তু ঢাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত এই গোলাপী রঙের স্থাপনাটি তার শিল্প পরিবেশের মধ্যে একটি আকর্ষণীয় চিত্র তুলে ধরে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই এলাকার অনেক টেক্সটাইল কারখানার মধ্যে একটির মালিক তার প্রয়াত মায়ের নামে নামকরণ করা জেবুন নেসা মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন, যা ৬৫০০ পোশাক শ্রমিকের জন্য অবকাশ হিসেবে (নামাজের পাশাপাশি) কাজ করে।
আশুলিয়ার দরগার পাড় এলাকায় আইডিএস গ্রুপের ফ্যাশন ফোরাম লিমিটেড কারখানার অভ্যন্তরে অবস্থান দৃষ্টিনন্দন জেবুন নেসা মসজিদের। চতুর্ভুজ আকৃতির অবকাঠামোর মাঝে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি গম্বুজ।
প্রাকৃতিক আলোবাতাস প্রবেশের জন্য পুরো মসজিদের দেয়ালজুড়ে রয়েছে অসংখ্য ছিদ্র, যা মসজিদটিকে করেছে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত। মসজিদের সামনে রয়েছে কাঁচে ঘেরা একটি সরু লেক। এই লেকের পানির মাধ্যমে বাতাস প্রাকৃতিকভাবে শীতল হয়ে প্রবেশ করে মসজিদে। এই কারণেই মসজিদটিতে লাগানোর প্রয়োজন হয়নি এসি কিংবা বৈদ্যুতিক পাখার।
স্টুডিও মরফোজেনেসিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সায়কা ইকবাল মেঘনা বলেছেন, একজন নারীর নামে নামকরণ থেকেই আমি এমন একটি স্থাপনা নির্মাণের ধারণা পাই, যেটি পোশাক শ্রমিকদের জন্য একটি সফট শেল্টার (বিকল্প আশ্রয়স্থল) হতে পারে। মেঘনা আরও বলেন, ‘এই জায়গাটি সকল পোশাক শ্রমিকের হওয়া উচিত। একজন স্থপতি হিসেবে এটি একটি বড় অর্জন।’
মুসল্লিরা বলছেন, শুধু এই এলাকাতেই নয়, সারাদেশের মধ্যে এরকম নকশার মসজিদ একটাই। গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ শ্রমিকসহ সবার নামাজের জন্য এত সুন্দর একটি মসজিদ নির্মাণ করায় তারা কৃতজ্ঞ। অনেক গরমের মধ্যেও ফ্যান ছাড়াই এই মসজিদে শীতল পরিবেশে নামাজ আদায় করেন তারা। পবিত্রতার প্রতীক ফিরোজা কালারের টাইলস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন অজুখানা। এছাড়া সুন্দর ব্যবস্থাপনায় এই মসজিদের মনোরম পরিবেশে নামাজ পড়তে পেরে খুশি গার্মেন্টস শ্রমিক নারী মুসল্লিরাও।
মসজিদটির ইমাম হাফেজ মুফতি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সারাদিন গার্মেন্টসের ভেতরে কাজ শেষে বিরতির সময় মসজিদের মনোরম পরিবেশে নামাজ আদায় করলে শ্রমিকদের মন প্রফুল্ল থাকে। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে এত সুন্দর একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন যা দৃষ্টান্ত।