ঈদের আগে গার্মেন্টস সেক্টর যাতে অশান্ত না হয় সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। প্রতিবছর বেতন বোনাস নিয়ে ঈদের আগে তৈরী পোশাক খাতে অসন্তোষ দেখা দেয়। এবার যাতে সেরকম কিছু না হয় সেজন্য আগেভাগে উদ্যোগ নিয়েছে নীট শিল্প কারখানার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ।
জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে ১৫ রমযানের মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত) বস্ত্র খাতসহ অন্যান্য খাতের রফতানি ভর্তুকি বাবদ সাত হাজার কোটি টাকা ছাড় করার আবেদন করেছে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। অর্থসচিবকে লেখা এক চিঠিতে অর্থছাড়ের আবেদন করেছেন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা আছে।
গতকাল মঙ্গলবার লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির পাশাপাশি তৈরি পোশাকশিল্পে বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো কঠিন সময় পার করছে। এর আগেও বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে শ্রম অসন্তোষ বিরাজমান থাকায় কারখানা বন্ধ ছিল। সে কারণে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। উৎপাদন খরচও বেড়েছে।
দেশের রফতানি শিল্পের ওপর ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখতে তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা অনেক ক্ষেত্রেই মূল উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে কার্যাদেশ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে কার্যাদেশ বাড়লেও বিভিন্ন কারখানায় নগদ অর্থের সংকট আছে।
এ ছাড়া সামনেই আছে বেতন ও ঈদের বোনাসের বড় চাপ। কঠিন এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের বেতন, বোনাসসহ অন্যান্য ভাতা পরিশোধ করতে না পারলে আবার শ্রম অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তখন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার সুযোগ পাবে বলে মনে করছে বিকেএমইএ। এই বাস্তবতায় বিকেএমইএ ১৫ রমযানের মধ্যে রফতানি ভর্তুকির সাত হাজার কোটি টাকা ছাড় করার আবেদন করেছে।
চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পে বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। বিগত সময়গুলোতে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের কারখানায় শ্রম অসন্তোষ ছিল। ফলে কারখানাসমূহ বন্ধ থাকায় উৎপাদন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ফলে এ সময়ে অস্বাভাবিকভাবে উৎপাদন খরচও বেড়েছে।
কিছু দেশের রপ্তানি শিল্পের ওপর বায়ারদের আস্থা ধরে রাখার স্বার্থে তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা অনেক ক্ষেত্রেই মূল উৎপাদন খরচের থেকে কম মূল্যে কার্যাদেশ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। উল্লিখিত পরিস্থিতিতে কার্যাদেশ বাড়লেও বিভিন্ন কারখানায় নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া সামনেই রয়েছে বেতন ও ঈদ বোনাসের বিশাল চাপ। এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে বেতন-বোনাসসহ অন্যান্য ভাতা পরিশোধ করতে না পারলে পুনরায় শ্রম অসন্তোষ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক শিল্পে স্থিতিশীলতা এবং উৎপাদন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকারের তথা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
জানা গেছে, বর্তমান ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা বাবদ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে দাবি জমা ৭ হাজার কোটি টাকা। যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে (১৫ রমযানের মধ্যে) নগদ সহায়তা বাবদ এই পাওনা ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা না হয় তবে রপ্তানি খাতে একটা মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
এমতাবস্থায় অতি জরুরি ভিত্তিতে চলতি মার্চের (১৫ রমযানের মধ্যে) মধ্যে নগদ সহায়তা বাবদ প্রাপ্য ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়করণের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানায় বিকেএমইএ।
এদিকে ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটে বিপাকে বেশকিছু পোশাক কারখানার মালিক। কিছু ব্যাংকে বিদেশি ক্রেতাদের অর্থ আটকে আছে বলেও অভিযোগ তাদের। এতে শ্রমিকদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ফলে বেতনের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পোশাক কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভে প্রতিনিয়ত বন্ধ হচ্ছে কারখানা। তবে শ্রম সচিব জানালেন, কারখানা সচল রাখতে সব ধরনের সহায়তা করছে সরকার।
বকেয়া বেতনসহ নানা দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে তৈরি পোশাক খাত। প্রায় প্রতিদিনই বন্ধ হচ্ছে কোনো না কোনো কারখানা।
তারল্য সংকটের পাশাপাশি, ব্যাংকগুলোতে বিদেশি ক্রেতাদের পরিশোধিত অর্থ আটকে থাকার অভিযোগ অনেক কারখানা মালিকের। এছাড়া মালিক খেলাপি হওয়ায় নতুন করে কোনো সহায়তাও পাচ্ছেন না অনেকে। ফলে বাকি পড়ছে শ্রমিকদের বেতন। এ অবস্থায় শ্রমিকদের স্বার্থে এবং কারখানা সচল রাখতে নগদ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মালিকপক্ষ পাওনা টাকা ব্যাংক থেকে পাচ্ছে না। ফলে তারা সমস্যার কারণে বেতন দিতে পারছে না।
শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ব্যাংক থেকে মানি লন্ডারিং করে টাকাগুলো চলে গেছে। সরকার থেকে আমরা যে সাপোর্ট দিচ্ছি তা হলো শ্রমিক অসন্তোষকে দূর করে আমাদের অর্থনীতিটাকে ধরে রাখার জন্য।
কারখানা মালিকরা বলছেন, কিছু শ্রমিকদের দাবি যৌক্তিক হলেও, এর বাইরেও অনেকে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছেন। সংকট উত্তরণে সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান তাদের।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এই সেক্টরে যদি অসন্তোষ চলতে থাকে তাহলে আমাদের প্রধান রপ্তানি বাণিজ্য থাকবে না।
গার্মেন্ট ও শিল্প শ্রমিক ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, শ্রমিক যদি তাঁর পাওনা না পায় তাহলে রাজপথে নামা ছাড়াতো তার আর কোনো বিকল্প নাই।
বেতনের পাশাপাশি হাজিরা বোনাস, নাইট বিল, টিফিন বিল বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। পরিস্থিতি সামাল দিতে সম্প্রতি শ্রমিকদের বার্ষিক বেতন ৫-১০ শতাংশ বৃদ্ধিসহ ১৬ টি দাবি মেনে নিলে সচল হয় কারখানা।