DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজধানী

ডেভিল হান্টের পাাশাপাশি শুরু ‘বিশেষ গোয়েন্দা অভিযান’

রমযানে ছদ্মবেশে অপরাধীদের শনাক্ত করবে পুলিশ

পবিত্র রমযানকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে অপরাধীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। সাধারণত এসময় ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির ঘটনা বেশি ঘটে। প্রতিবছরই রমযানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। বাজারে ক্রয়-বিক্রয় বেড়ে যাওয়ায় অপরাধীদের তৎপরতাও বাড়ে। এ কারণে রমযানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে

নাছির উদ্দিন শোয়েব
Printed Edition
Default Image - DS

নাছির উদ্দিন শোয়েব: পবিত্র রমযানকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে অপরাধীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। সাধারণত এসময় ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির ঘটনা বেশি ঘটে। প্রতিবছরই রমযানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। বাজারে ক্রয়-বিক্রয় বেড়ে যাওয়ায় অপরাধীদের তৎপরতাও বাড়ে। এ কারণে রমযানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ আগে থেকেই পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। তবে এবার অন্তর্বর্তী সরকারের সময় রমযানে যাতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশি তৎপর রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এবার রমযানে অপরাধ দমনে সব ইউনিট মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ সদরদফতরে রমযানের আইনশৃঙ্খলার বিষয় বিশেষ বৈঠক করা হয়েছে। র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ আলাদাভাবে অভিযান চালানোর কথা বলছে। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, রমযান উপলক্ষে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টির অপতৎপরতা রোধে টহল আরও জোরদার করার ঘোষণা করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বলছেন-পবিত্র রমযানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘অলআউট অ্যাকশন’ শুরু হয়েছে। যৌথবাহিনীর চলমান ‘ডেভিল হান্ট’ অপারেশনের মধ্যে এ ধরণের অভিযান চালাবে গোয়েন্দা পুলিশ। র‌্যাব জানিয়েছে, ছিনতাই, চাঁদাবাজি রোধে এই বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। রমযান মাসে ডিবির কার্যক্রম আরও বেগবান করে নগরবাসীকে অধিকতর নিরাপদে রাখার আশ্বাস দিয়েছেন ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক। তিনি বলেন, রমযানে নগরবাসী যাতে নিরাপদে এবাদত-বন্দেগি করতে পারেন, সেজন্য ডিবির কার্যক্রম আরও বেগবান করা হয়েছে। আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি, নগরবাসী এ সময় অধিকতর নিরাপদ ও স্বস্তির পরিবেশে থাকবেন। রমযান উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ডিবির পরিকল্পিত কার্যক্রমের’ বিষয়ে জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকার মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, আজ থেকে আমরা চলমান কার্যক্রমের পাশাপাশি রমযানকে সামনে রেখে বিশেষ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছি। এটিকে ‘বিশেষ গোয়েন্দা অভিযান’ আখ্যা দিয়ে, যার মাধ্যমে ‘ছদ্মবেশে অপরাধীদের শনাক্ত’ করার কথা বলেন তিনি।

রেজাউল করিম বলেন, রোজার সময় মানুষের কর্মযজ্ঞ বাড়ে। বিশেষ করে টাকা-পয়সার লেনদেন বেশি হয়। শপিংমল, ব্যাংক, বীমাগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়ে। রেলস্টেশন, বাসটার্মিনাল কিংবা সদরঘাটসসহ অন্যন্য জায়গাতে মানুষের উপস্থিতি বাড়ে। এসব জায়গায় কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে সেজন্য আমাদের গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি দূরের যাত্রাপথ বিশেষ করে বাসে কোন দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে লক্ষ্যে আমরা গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে আগে থেকেই ডিবির তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছি। এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভাষ্য, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের বেশিরভাগের বয়স ‘১৫-২০ এর মধ্যে’, যাদের অনেকেই ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য’।

তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আবার কিছু ফ্যাসিস্ট পতিত রাজনৈতিক শক্তি তাদের ইন্ধন দিয়ে অপরাধ কার্যক্রমে জড়িয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অলআউট অ্যাকশনে’ যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন: আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যৌথবাহিনী সারাদেশে তৎপরতা বাড়িয়েছে। অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীও মাঠে আছে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সেনাবাহিনী। আমরা বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে তাদের সহায়তা করছি, যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত থেকে শুরু করে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আমরা বদ্ধপরিকর। ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে গোয়েন্দা নজরদারী শক্তিশালী করা। আমরা সে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা আশা করি কিছুদিনের মধ্যে আপনারা আরও ভাল অবস্থান দেখতে পাবেন সে প্রত্যাশা করছি। জনসাধারণের প্রতি তার আহ্বান, ডিবি পরিচয়ে কেউ গোপনে তুলে নেওয়া বা সিভিল পোশাকে তল্লাশি, এ ধরনের কার্যক্রম কেউ করলে আমাদেরকে অবহিত করবেন। পাশাপাশি নাশকতা করতে পারে এমন কোন তথ্য থাকলে ডিবিকে সহায়তা করুন। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিনতাইকারী, ডাকাত ও অভ্যাসগত অপরাধীকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা যেমন সাধারণ মানুষের ভরসা, আস্থাস্থল হতে চাই, তেমনি অপরাধীদের জন্য হতে চাই আতঙ্ক। সে মূলনীতি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ছোট অপরাধ, বড় অপরাধের জন্ম দেয়। তাই যে কোন অপরাধীর ক্ষেত্রে আমরা নিয়েছি জিরো টলারেন্স নীতি। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির বিরুদ্ধে ডিবির নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী হোক বা যে কোন সন্ত্রাসীই হোক, ডিবির জালে তাকে ধরা পড়তেই হবে। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করে এদেরকে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দিবো না।

এরআগে ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, রমযান উপলক্ষে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টির অপতৎপরতা রোধে টহল আরও জোরদার করতে হবে। গত সোমবার ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আসন্ন পবিত্র মাহে রমযান উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সমন্বয় সভার সভাপতিত্ব তিনি এ কথা বলেন। সভায় ঢাকা মহানগর এলাকার ব্যাংক, শপিংমলের নিরাপত্তা, সড়ক, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রমযান উপলক্ষে নানা অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়। নিত্যপণ্যের দাম যাতে বৃদ্ধি না হয় সেই দিকে আপনাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতিটি শপিংমলের সামনে এবং আশপাশে স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি মার্কেটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে যানজট। রমযানে যানজট নিরসনে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ও ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে। সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। সবার আন্তরিক সহযোগিতায় রমযান মাস সুন্দরভাবে শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডিএমপি কমিশনার। সমন্বয় সভায় যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। আসন্ন রমযানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমন্বয় সভায় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মতামত দেন। র‌্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, ‘চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় বেড়েছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই। রমযানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তবে, র‌্যাব আপ্রাণ চেষ্টা করছে এসব অপরাধ দমনের জন্য।’ শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ির মাতুয়াইলে র‌্যাবের টহল কার্যক্রম পরিদর্শন গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কতিপয় দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংস কায়দায় হামলা ও আক্রমণ চালাচ্ছে। এসব অপরাধ দমনে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে র‌্যাব ফোর্সেসও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করছে।