কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) মহাপরিচালক (ডিজি) ছাইফুল আলমসহ আওয়ামী দোসরদের অপসারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি) অ্যাসোসিয়েশন। ডিজির অদক্ষতায় কৃষি মন্ত্রণালয় খেয়ালখুশিমতো কর্মকর্তাদের বদলি করছে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট খামারবাড়ির সামনে আওয়ামী সরকারের সমর্থনে কথিত শান্তি সমাবেশে উপস্থিত কর্মকর্তাদের নিয়ে ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি) অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব মো: রেজাউল ইসলাম (মুকুল) বলেন, ডিএই’র ডিজির অদক্ষার সুযোগে কৃষি মন্ত্রণালয় নিয়মবহির্ভূতভাবে অধিদফতরের প্রস্তাব ছাড়াই খেয়ালখুশি মতো কর্মকর্তাদের বদলি করে চলেছেন। এসব বদলির মাধ্যমে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ন্যায় কৃষিবিদদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তাই ডিএই’র বর্তমান ডিজিসহ ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগীদের অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানাচ্ছি। তবে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কোন কোন কর্মকর্তার মদদে ডিজি এসব করছেন তা উল্লেখ করেননি তিনি। তবে, সাংবাদিক সম্মেলনে সরবরাহ করা ডকুমেন্টে বর্তমান কৃষিসচিব ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ানকেও স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কৃষিসচিব ২০২১ সালে মুজিব শতবার্ষিকী বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় এবং তাকেও অপসারণের কথা বলা হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের আগের দিনেও অর্থাৎ ৪ আগস্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বর্তমান ডিজি মো: ছাইফুল আলম, বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকসহ খামারবাড়ির অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারী সরকারি চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে রাজ্জাক-নাসিম-ওয়াহিদা গংদের নিয়ে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ জানিয়ে খামারবাড়ি চত্বরে রাজনৈতিক মিছিলে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেজাউল ইসলাম জানান, ডিএই’র বর্তমানে ২৯টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। সরকার বদলের পর মাত্র ৯-১০টি প্রকল্পে নতুন পিডি দেয়া হয়েছে। বাকিগুলোতে আওয়ামী লীগের দোসররাই বহাল তবিয়তে আছে। এ অবস্থায় বাকি প্রকল্পগুলোতেও পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ বিগত ১৫ বছরে প্রত্যেকটি প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে।

এ সময় ডিএই’র একটি প্রকল্পের পরিচালকের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত সময়ে ওই পিডি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ফেসবুকে রাজনৈনিত স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি এখনো পিডি হিসেবে বহাল আছেন।

গত বৃহস্পতিবার ডিএইর প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের উপপরিচালক ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদকে মেহেরপুরের বারাদি হর্টিকালচার সেন্টারে উপপরিচালক পদে বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করে কৃষি মন্ত্রণালয়। মাহবুবুর রশীদের স্থলাভিষিক্ত করা হয় উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের উপপরিচলক (আমদানি) মো: মুরাদুল হাসানকে। সাংবাদিক সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ উপস্থিত থাকলেও মঞ্চে ওঠেননি।

ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদকে বদলির ইস্যুতে তিনি বলেন, এ বদলিতে আমরা মর্মাহত হয়েছি। আমাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ২০তম বিসিএসের কর্মকর্তা মাহবুবুর রশীদ বিগত আওয়ামী লীগের আমলে বঞ্চিত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

তিনি সরাসরি বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তাকে সরিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় যাকে উপ-পরিচালক (প্রশাসন) পদায়ন করেছে তিনি শেখ কামালের জন্মদিনে ফুল দিয়েছেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি) অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের মধ্যে ড. শাফায়েত আহমেদ সিদ্দিক, হাসিবুল হাসান, বাসিরুল আলম, আরিফ মাহমুদ মিতু, কাজী শফিকুল হক শামীম, আমিরুল বাহরাইন ও গোলাম মোস্তফা শিমুল প্রমুখ।