DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজধানী

২৫ কোটি টাকা ব্যবসা হওয়ার প্রত্যাশা

শীতলক্ষ্যার তীরে ঈদ কেন্দ্রিক জমজমাট জামদানির হাট

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী জামদানির হাট। রাজধানীর কাছে শীতলক্ষ্যার তীর ঘেঁষে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গড়ে উঠা জামদানির হাটে পুরোদমে শুরু হয়েছে বেচাকেনা। আকর্ষণীয় নকশার মানসম্পন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা।

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition
P-12-G

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী জামদানির হাট। রাজধানীর কাছে শীতলক্ষ্যার তীর ঘেঁষে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গড়ে উঠা জামদানির হাটে পুরোদমে শুরু হয়েছে বেচাকেনা। আকর্ষণীয় নকশার মানসম্পন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। এদিকে, কারখানাগুলোয় দিন-রাত চলছে জামদানি বুননের কাজ। ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নিবন্ধন সনদ পাওয়া এই শিল্পের প্রসারে নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানালো বিসিক। প্রতি শুক্রবার ৩ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জের জামদানি হাটে কয়েক কোটি টাকার জামদানি পণ্য বেচাকেনা হয়।

রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌরসভার নোয়াপাড়া গ্রামে চার শতাধিক কারখানা নিয়ে গড়ে উঠেছে জামদানি পল্লী। এছাড়া প্রায় অর্ধশত পাইকারি বিক্রয় কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন পাইকারি ও খুচরা মূল্যে জামদানি বিক্রি হয়। দুই হাজারের অধিক জামদানি শিল্পী এ পেশায় নিয়োজিত আছেন। তাদের তৈরি জামদানি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এই পল্লীকে ঘিরেই প্রতি সপ্তাহে বসে জামদানি হাট।

জামদানি পল্লীর মূল আকর্ষণই হচ্ছে এই সাপ্তাহিক হাট। প্রতি শুক্রবার ভোর পাঁচটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে কয়েক কোটি টাকার জামদানি পণ্য বেচাকেনা হয়। তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে চার লাখ টাকা মূল্যের জামাদানিও পাওয়া যাচ্ছে হাটে।

মো. রকি নামে এক জামদানি বিক্রেতা বলেন, ‘এবারের ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিজেদের কারখানায় সূক্ষ্ম সুতার ডিজাইনে নানা রঙের আকর্ষণীয় জামদানি পণ্য তৈরি করেছি। ঈদ উপলক্ষে বিক্রিও মোটামুটি ভালো হচ্ছে। তবে সুতা ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা আগের মতো লাভ করতে পারছি না। দাম বেশি রাখলে ক্রেতারা নিতে চায় না।’

ফজলু মিয়া নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘আমার কাছে সর্বনিম্ন ৬০-৭০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা দামের জামদানি আছে। কাস্টমার অর্ডার দিলে চার লাখ টাকা দামের জামদানিও নিজস্ব কারখানায় বানিয়ে দেই।’

দেশ বিদেশে জামদানি পণ্যের চাহিদা বাড়ায় ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জের জামদানি জিআই পণ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। এরপর থেকে রফতানিতে কয়েক ধাপ এগিয়ে যায় দেশের জামদানি শিল্প। তবে প্রচুর পরিমাণে জামদানি উৎপাদন করেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাঁতীদের।

জামদানি কারখানায় কর্মরত আছিয়া বেগম নামে এক তাঁতী বলেন, ‘সূক্ষ্ম সুতার ঘন ডিজাইনের একটা জামদানি শাড়ি বানাতে তিন মাসও সময় লাগে। কিন্তু আমরা যে পরিশ্রম করি সে অনুযায়ী ন্যায্য দাম পাই না। শাড়িটা ভালো দামে বিক্রি হলে মালিক আমাদেরও ন্যায্য মজুরি দিতো।’

সারা দেশের মানুষ বিদেশী পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্য হিসেবে জামদানি ব্যবহার করলে তাঁতীরা ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে মনে করেন কারখানা মালিকরা। আনোয়ার জামদানি উইভিং ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে দেশের প্রত্যেকটা পরিবার যদি অন্তত একটা করে জামদানি কিনেন তাহলে এবারের ঈদ আমরা ভালোভাবেই করতে পারব। তাঁতীদের মজুরি ও বোনাস ভালোভাবে দিয়ে আমরা সবাই মিলে আনন্দের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারব।’

তবে জামদানি শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও সমৃদ্ধ করতে সরকারিভাবে মেলার আয়োজন ও প্রচারের পাশাপাশি গুণগত মান বৃদ্ধির ব্যাপারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান জামদানি বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জামদানি শিল্পের প্রচার প্রসার বাড়াতে আমরা আমাদের ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছি। তাঁতীরাও নিজেদের পেজের মাধ্যমে অনলাইনে প্রচার করছেন।

প্রতি সপ্তাহে একদিন হাট বসছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এছাড়া আমরা ঢাকায় বিভিন্ন সময় জামদানি পণ্যের মেলার আয়োজন করছি। আমরা ওয়ার্ল্ডওয়াইড প্রচারের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে কাজ করছি। পাশাপাশি এখানকার তৈরি জামদানি পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধির ব্যাপারেও আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি।

উল্লেখ্য, এবারের ঈদ মৌসুমে রূপগঞ্জের জামদানি পল্লী থেকে অন্তত ২৫ কোটি টাকার জামদানি পণ্য বিক্রির আশা করছেন জামদানি পল্লীর কারখানা মালিক ও ব্যবসায়ীরা।