DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজধানী

গণজাগরণ মঞ্চের সেই লাকী হঠাৎ রাজপথে কেন?

১১ বছর আগে ২০১৩ সালে রাজধানীর শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পক্ষে গণজাগরণমঞ্চে মাতাল কন্ঠে বিতর্কিত স্লোগান দেয়া সেই ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী লাকী আক্তার হঠাৎ রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ ১১ বছরের বেশি সময় ধরে তার খোঁজ ছিল না।

নাছির উদ্দিন শোয়েব
Printed Edition
image002

১১ বছর আগে ২০১৩ সালে রাজধানীর শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পক্ষে গণজাগরণমঞ্চে মাতাল কন্ঠে বিতর্কিত স্লোগান দেয়া সেই ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী লাকী আক্তার হঠাৎ রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ ১১ বছরের বেশি সময় ধরে তার খোঁজ ছিল না। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার যখন দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে গাঢাকা দিয়ে থাকা লাকীকে আবার দেখা যাচ্ছে রাজপথে। তবে এবার সে মাঠে তৎপর অন্য ইস্যু নিয়ে! নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের প্রতিবাদের দাবিতে কয়েকটি সংগঠন যখন বিক্ষোভ করছে তখন তাকে দেখা যাচ্ছে কোনো একটি মিছিলের সম্মুখ সারিতে। তাকে আবার গলা উচুঁ করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিষদাগার করে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পক্ষে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার উদ্দেশে গণজাগরণ মঞ্চের লাকী এবার কার ইন্ধনে মাঠে নেমেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাকে কারা নামিয়েছে, কারা ইন্ধন দিচ্ছে এবং নেপথ্যে কলকাঠি নাড়াচ্ছে কোন শক্তি তাদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতাসহ কয়েকটি সংগঠন। ইতিমধ্যে লাকী গ্রেফতারের জোর দাবি উঠছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে দেশজুড়ে অব্যাহত নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ মোট ৯ দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজধানীর শাহবাগ অঙ্গন। এসময় আন্দোলনকারী সাথে পুলিশ সদস্যদের মারামারি ঘটনা ঘটে। পরবর্তীত সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বাম ধারার রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনসমূহ। সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লাকী আক্তার বলেন, দেশজুড়ে মানুষ ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে এ সরকার নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তার ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। লাকী আক্তার পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ধর্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিরসনের দাবিতে আগামী ১৫ মার্চ সকাল ১১টায় শাহবাগে গণমিছিল আয়োজন করা হবে।

লাকীকে গ্রেপ্তারের দাবি: গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক লাকী আক্তার ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের গ্রেপ্তার, তিন মাসের মধ্যে ধর্ষণের বিচার নিষ্পত্তিসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগে শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী। বুধবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে এক মানববন্ধনে এ ঘোষণা দেন তিনি। হাদী বলেন, গত ১৪ বছরে যে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে, হাজার হাজার আয়নাঘর গড়া হয়েছে, আল্লামা সাঈদীকে চিকিৎসার নামে হত্যা করা হয়েছে, হেলিকপ্টার থেকে গুলী করে আমাদের ভাইবোনদের কলিজা ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়েছে সেগুলো যে কায়েম করেছে সেই অসভ্যতার নাম শাহবাগ, শাহবাগ, শাহবাগ। তিনি বলেন, গত পনের বছরে মোল্লাদের এমনভাবে প্রান্তিক করা হয়েছে যখন তারা কোনো কিছুর জন্য দাঁড়ায় তখন তারা মব মব বলে চিল্লাচিল্লি করে। আমরা সচিবালয়সহ অনেক জায়গায় দাঁড়িয়েছি কিন্তু কেউ বলতে পারবে আমরা পুলিশের গায়ে হাতে দিয়েছি? ইনকিলাব মঞ্চের ঘোষিত পাঁচ দাবি হলো- ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা এবং মিথ্যা মামলাকারীর বিচার করতে হবে; দেশকে অস্থিতিশীল করতে মব তৈরি করে পুলিশের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে; শাহবাগের কসাই লাকী আক্তার ও অন্যদের গ্রেপ্তার করে ২০১৩ সালের সকল ষড়যন্ত্র উন্মোচিত করতে হবে; জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করে শাপলা ও সকল গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদী বলেন, কোন ধরনের উসকানি ছাড়া এক শাহবাগী পুলিশের ওপর লাঠি ছুড়েছে। পুলিশ কমিশনার মামুনকে উপর্যুপুরি মারধর করেছে। এরপর সাত-আটজন সন্ত্রাসী তার ওপর আক্রমণ করেছে। কেউ বলতে পারবেন গতকাল পুলিশের হাতে লাঠি ছিল?

এদিকে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লাকী আক্তারের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ইনকিলাব মঞ্চ। গতকাল বুধবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভাস্কর্য চত্বরে এসে শেষ হয়। এ সময় জবি ইনকিলাব মঞ্চের মিডিয়া সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, ‘২০১৩ সালে তারা যেভাবে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল, ২০২৪ সালের বিপ্লবোত্তর সময়েও সেই ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের মদদদাতা এই গোষ্ঠীকে প্রতিহত করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধারা মরে যায়নি। দ্বিতীয়বার শাহবাগ উত্থান আমরা যেকোনো মূল্যে ঠেকাব। সংগঠনটির সদস্য সচিব শান্তা আক্তার বলেন, ‘তারা বরাবরই দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন সময়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দ্রুত লাকীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে আহ্বায়ক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘২০১৩ সালে একদল দেশদ্রোহী বিচার ব্যবস্থাকে কলুষিত করে ভিন্ন মতের মানুষদের হত্যা করার বৈধতা দিয়েছিল। সেই উগ্রপন্থি রাষ্ট্রবিরোধীরা আবারও রাজপথে নেমে জুলাই আন্দোলনের শহীদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাচ্ছে। তবে তারা মনে রাখুক—এটি ২০১৩ নয়, এটি ২০২৫। এখানে তাদের কিংবা তাদের পৃষ্ঠপোষকদের কোনো ঠাঁই নেই।

এদিকে লাকী আক্তারের গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার রাত ২ঘটিকায় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি পুরান ঢাকর বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিণ করে পুণরায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসে। এসময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ‘ল তে লাকী, তুই হাসিনা তুই হাসিনা’, ‘খুনি হাসিনার দোসরেরা, হুশিয়ার সাবধান’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, শাহবাগ নো মোর’, ‘চব্বিশের বাংলায়, শাহবাগের ঠাঁই নাই’, ‘শাহবাগীরা হামলা করে, ইন্টেরিম কী করে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, শাহ বাহবাগিদের বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্ত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারী মো. রিয়াজুল ইসলাম ও জুলাই বিপ্লবের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মো. নুর নবী বক্তব্য রাখেন।

এসময় তারা বলেন, আমার একসাগর রক্ত ও হাজার মানুষের জীবন ও পঙ্গুত্বের বিনিমেয়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা ধুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য ভারতীয় হায়না বাহিনী আবার লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালে যেসকল নেড়ি কুকুরের দল শাহবাগে ঘেউ ঘেউ করেছিল আমরা তাদের ঘেউ আমরা শুনতে পাচ্ছি। কুখ্যাত লাকী সহ যারা সেসময় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেছিলো আমরা অনতিবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি করছি। আমরা পরিস্কারভাবে বলে দিচ্ছি, আবার যদি আপনারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেন, আবার যদি দেশকে অস্থিতিশীল করতে চান, আবার যদি এদেশের আলেমদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করেন তাহলে আবার জুলাই বিপ্লব হবে। তারা আরও বলেন, কখনো লাকী বেশে, কখনো আওয়ামী লীগ বেশে বা অন্য কোন রূপে ভারতীয় হায়নার যেকোন সময় বাংলাদেশের মানচিত্রে হামলে পড়তে পারে তাই দেশবাসীকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। আওয়ামী দোসর নামক এসব শাহবাগীরা আবার দেশকে অস্থিতিশীল করার অপতৎপরতা চালালে আমরা তাদের শক্ত হাতে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত আছি।