DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজধানী

ছাত্র-জনতার বিপ্লব : গৌরব গাঁথা

বিজয়ের দিনে পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুলীতে শহীদ হন হাফেজ জুবায়ের

সিপাহি বিদ্রোহ থেকে ২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতা ছিলেন প্রথম সারিতে। ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ে মুজাহিদ আলেমদের ফাঁসি, ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এক কুচক্রী মহল বারবার তাঁদের

মুহাম্মদ নূরে আলম
Printed Edition
jubaer

সিপাহি বিদ্রোহ থেকে ২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতা ছিলেন প্রথম সারিতে। ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ে মুজাহিদ আলেমদের ফাঁসি, ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এক কুচক্রী মহল বারবার তাঁদের এই গৌরবময় ভূমিকা মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালিয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও কওমি-আলীয়া মাদরাসার ছাত্র ও আলেম সমাজের ভূমিকা ছিল অনন্য। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে কিংবদন্তিতুল্য আখ্যান হয়ে বেঁচে থাকবে অনাগত দিনে। প্রায় দুই হাজার শহীদ এবং ৩০ হাজার আহত গাজি ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশে সৃষ্টি হয়েছে নতুন ইতিহাস। ফ্যাসিবাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে আসা এসব আলেম ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতার অনেকেই শহীদ হয়েছেন, অনেকে আহত হয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগই এক নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি রচিত হয়েছে। এই জুলাই বিপ্লবের সত্য ইতিহাস প্রজন্মের পর প্রজন্ম সংরক্ষিত থাকবে ইনশাল্লাহ।

তেমনিই হাফেজ জুবায়ের ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী আন্দোলনের একজন আলেম শহীদ। তার হৃদয়ে সংরক্ষিত আছে আল কুরআন। গত ৫ আগস্ট তার নামের সাথে যোগ নতুন আরেকটি বিশেষণ-শহীদ। তিনি ছিলেন রাজধানীর খিলগাঁও চৌরাস্তা মোড়ের আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদরাসার ছাত্র। ৫ আগস্ট ২০২৫ হাসিনার বিদায়ের পর যখন তিনি বিজয় মিছিলে নেমেছিলেন তখন স্থানীয় খিলগাঁও থানার পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকে গুলী করে হত্যা করে। গুলীতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমাদসহ আহতদের দ্রুত খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে অব্স্থা গুরুতর বিবেচনায় তাকে মুগদা সরকারি হাসপাতলে রেফার করেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। মুগদা সরকারি হাসপাতলে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি ৭টা ২৯ মিনিটে হাফেজ জুবায়ের শাহাদাত বরণ করেন। কুরআনের হাফেজদের আত্মত্যাগ এই আন্দোলনে অনেক বেশি। আমরা যেন তাদের মুল্যায়নে কৃপণতা না করি।

যেভাবে শহীদ হন: ফ্যাসিস্ট হাসিনার জুলুম থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করতে তিনি নেমেছিলেন রাজধানী ঢাকার রাজপথে। আল কুরআনের এ হাফেজ মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে শ্বাস নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু খুব বেশী ক্ষণ নয়। মাত্র কয়েক ঘন্টা। সারা দেশ যখন হাসিনা মুক্ত বিজয়ের আনন্দে উচ্ছল। রাজপথে জনতার ঢল। দিনের সূর্য তখন ঢলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। ঘড়ির কাঁটায় বিকাল পৌনে ছয়টা। খিলগাঁও চৌরাস্তা মোড়ের আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদরাসার ছাত্র ও বৈষম্যবিরোধী আরো অনেক শিক্ষার্থীর সাথে বিজয় মিছিলে শামিল হয়েছিলেন ২০২৪ স্বাধীনতা সংগ্রামী হাফেজ মোহম্মদ জুবায়ের আহমাদ। হাসিনার দোসররা তখনও হিংস্র আর আগ্রাসী। অস্ত্র হাতে পালিয়ে যেতে যেতে উন্মাদের মতো বিজয় মিছিলে গুলী করে পুলিশ ও আওয়ামী ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। গুলীতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমাদসহ আহতদের দ্রুত খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে অবস্থা গুরুতর বিবেচনায় তাকে মুগদা সরকারি হাসপাতলে রেফার করেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। মুগদা সরকারি হাসপাতলে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি ৭টা ২৯ মিনিটে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আহবানে জান্নাতের পাখি হয়ে উড়ে যান। শাহাদাত বরণ করেন খুরআনের হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমাদ। আল কুরআনের হাফেজ সন্তানকে হারান বাবা কামাল উদ্দিন। হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমাদের মা-বাবার বুক জুড়ে এখন শুধু শূন্যতা। তবে দেশের জন্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাদের পুত্র শাহাদাত বরণ করায় তারা গর্বিত। শহীদের পিতা কামাল উদ্দিন নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে তার সন্তানের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় শিক্ষার্থীদের ওপরে সেদিন পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যারা গুলীবর্ষণ করে: প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান এ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলীবর্ষণে এ সময় অংশ নিয়েছেন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার ডিএমপি সুদ্বীপ কুমার চক্রবর্তী, মো. সাইদুর রহমান আজাদ (এএসপি ডিবি), খিলগাঁও থানার ওসি সালাহউদ্দিন মিয়া, খিলগাঁও থানার এস আই যথাক্রমে সুদ্বীপ কুমার বিশ্বাস, বদরুল আলামীন, বাবুল, সোহেল রানা,আবু জাহিদ তুহিন, আশরাফুল ইসলাম, শামীম, শিহাব হোসেন, মোহাম্মদ তারেক নাজির, মো. মোজাম্মেল হোসে, মো. জামাল হোসেন, মনিষ ঘোষ, ওবায়দুর রহমান, আবদুল রহমান, আরসেল তালুকদার, শিহান রহমান শোভন, রবিউল হোসেন, নিজামউদ্দীন, মফিজ, সেলিম হোসেন, ওয়াদুদ তালুকদার, কামালসহ শেখ হাসিনার দোসররা। মুক্ত স্বাধীন এ বাংলাদেশে ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সময়ের দাবি, এ দাবি পূরণে ব্যর্থ হলে হাসিনার মতো নতুন নতুন ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার মাথাচাড়া দিবে, যা কারো কাম্য নয়।

আলেমগণ ও মাদরাসার ছাত্ররা বলেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে টানা দেড় দশকের শাসনামলে দেশ জুড়ে জুলুম-নির্যাতন, দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচার, ত্রাস ও গ্রাসের রাজত্ব কায়েম করা নিষ্ঠুর জালেম গোষ্ঠীর দৃষ্টান্তমূলক পতন ঘটে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। জুলাই মাসে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলন পূর্ণতা পায় ৫ আগস্ট ২০২৪ এর গণবিপ্লব। তাই সে দিনটিকে ঘোষণা করা হয় ‘৩৬ জুলাই’। স্বাধীন দেশে পরাধীনতার জাতাকলে নিষ্পেষিত জনগণ সেদিন দ্বিতীয়বার ফিরে পায় স্বাধীনতার স্বাদ। সমগ্র দেশের মানুষ সেদিন একযোগে রাজপথে নেমে আসে এবং উদযাপন করে বিজয়ের নেয়ামত। সেদিনটি ছিল মুহাররম মাসের ২৯ তারিখ, যে মাসে পতন হয়েছিল অতীতের এক জালেম ফেরআউনের। যুগান্তকারী এই ইতিহাস বিনির্মাণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে জাতি-ধর্ম-শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে আলেম-উলামা এবং মাদরাসা শিক্ষার্থীরাও। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আলেম সমাজের অংশগ্রহণ এবং বিপ্লবি ভূমিকা নিয়ে সাজানো হয়েছে এই আয়োজন।