DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজধানী

বাংলাদেশে ১/১১ এর সময়ে হস্তক্ষেপ করা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির ভুল ছিল

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক জন এফ. ড্যানিলোভিচ বলেছেন, বাংলাদেশে এক এগারোর সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভুল ছিল। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে মনোযোগ দেয়নি। ড্যানিলোভিচ আরও বলেন, বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition
Default Image - DS

সাবেক মার্কিন কূটনীতিক

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক জন এফ. ড্যানিলোভিচ বলেছেন, বাংলাদেশে এক এগারোর সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভুল ছিল। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে মনোযোগ দেয়নি। ড্যানিলোভিচ আরও বলেন, বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারে। স্বৈরাচারী শাসন কখনোই মার্কিন স্বার্থের অনুকূলে নয়। তিনি ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির কিছু ভুলের কথা স্বীকার করেন। সে সময় মার্কিন সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সমর্থন নিয়ে সেই ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে, তিনি বলেন। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তাদের অর্থায়ন নীতি এবং চলমান সংস্কারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। নাগরিক সমাজকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, এবং গত ১৭ বছরে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার করে সুশাসন সংস্কারের জন্য ব্যবহার করা উচিত।

গতকাল শনিবার সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বিশেষ আলোচনা সভায় তিনি এই কথা বলেন। “মাইলাম ও জন-এর সঙ্গে সংলাপ”, শীর্ষক অনুষ্ঠানে গণআন্দোলনের পর বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের বর্তমান গতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠান সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান সঞ্চালনা করেন। আলোচক হিসেবে ছিলেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি. মাইলাম এবং সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন এফ. ড্যানিলোভিচ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন বিদেশি মিশনের কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, আন্তর্জাতিক, উন্নয়ন সংস্থা, নাগরিক সমাজের সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থী, রাজনীতিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি. মাইলাম এবং সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন এফ. ড্যানিলোভিচ।

গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরে ড্যানিলোভিচ বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতি ধারাবাহিকতা রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হল শাসক দলের জবাবদিহিতার অভাব। গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে হলে একটি শক্তিশালী সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক অপরিহার্য। স্বৈরাচারী শাসন কখনোই গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয়। আলোচনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও উল্লেখ করা হয়। “প্রবাসী সম্প্রদায় প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারে,” ড্যানিলোভিচ বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি তথ্য যুদ্ধের সম্মুখীন, এবং মার্কিন সরকার মিডিয়া ভিত্তিক বিভ্রান্তিমূলক তথ্য মোকাবিলার জন্য কাজ করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাংলাদেশে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য মার্কিন তহবিল সম্পর্কে দেয়া বিবৃতিও বিভ্রান্তিকর, যা মূলত কিছু ব্যক্তি দ্বারা প্রচারিত, যারা দুই দেশের সম্পর্ক অস্থিতিশীল করতে চায়। সেন্টমার্টিন দ্বীপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রম সম্পর্কিত বিভ্রান্তিমূলক তথ্য নিছক মিথ্যা প্রচারণা, যা কিছু গোষ্ঠী উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়াচ্ছে। সাবেক সরকার বিদেশি দেশগুলোর বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, যাতে তারা নিজেদের দুর্নীতি ও অনিয়ম আড়াল করতে পারে।

তিনি বলেন, সে সময় মার্কিন সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সমর্থন নিয়ে সেই ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তাদের অর্থায়ন নীতি এবং চলমান সংস্কারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। নাগরিক সমাজকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, এবং গত ১৭ বছরে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার করে সুশাসন সংস্কারের জন্য ব্যবহার করা উচিত।

রাষ্ট্রদূত মাইলাম বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আমেরিকান জনগণকে সচেতন করার জন্য তার সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন,আমরা একটি ছোট সংগঠন গঠন করি এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমেরিকান জনগণকে সচেতন করার জন্য কাজ করি। গত পাঁচ বছরে আমরা অর্থায়নের ব্যবস্থা করেছি এবং এই উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’ তার সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত, বিশেষ করে গত দশ বছরে আমি বাংলাদেশ সফর করতে পারিনি, ভিসার জন্যে। মাইলাম বলেন, নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা ছিল তার জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। আমি যে তথ্য আমার সরকারের কাছে পৌঁছে দেব, তা সঠিকভাবে সংগ্রহ করাটা ছিল সবচেয়ে কঠিন অংশ। সেই সময় সরকার আমাকে তাদের পক্ষ নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিল।

সিজিএস এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান সুশাসন উন্নয়নকে উৎসাহিত করে এমন উদ্যোগ গুলোর গুরুত্ব পুর্নব্যক্ত করেন এবং উল্লেখ করেন যে, এই ধরনের আলোচনা বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক রূপান্তরকে পরিচালিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে সমর্থন ও একটি টেকসই এবং জবাবদিহিতামূলক শাসন কাঠামো নিশ্চিত করতে ধারাবাহিক সংলাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। আলোচনায় উভয় বক্তাই গণতন্ত্রে মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, মিডিয়ার প্রভাব অস্বীকার করা যায় না, এবং গণতান্ত্রিক আলোচনাকে শক্তিশালী করতে নাগরিক সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করা উচিত।