DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজধানী

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য নিরপেক্ষ ও সাহসী কর্মকর্তা খোঁজা হচ্ছে

নির্বাচনের আগে প্রশাসন সাজাতে সতর্কভাবে পা ফেলছে সরকার

দিন যতই যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আবেদন বাড়ছে। সরকারও আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য আস্তে আস্তে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে।

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition
DailySangram-Logo

কামাল উদ্দিন সুমন : দিন যতই যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আবেদন বাড়ছে। সরকারও আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য আস্তে আস্তে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে। বিশেষ করে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিকসহ বিভিন্ন তথ্য নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই চলছে। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পদায়নের চূড়ান্ত তালিকা (ফিটলিস্ট) তৈরি করা হচ্ছে সময় নিয়ে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রশাসন সাজাতে সতর্কভাবে পা ফেলছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে ডিসি ও পুলিশ সুপার (এসপি) পদে প্রাধান্য পাবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা। ভোটের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিসি পদে রদবদল চাইলে এ তালিকা ধরেই করতে হবে। ডিসি-এসপির পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তালিকা তৈরিরও কাজ চলছে।

সূত্র জানায়, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তা এখন ডিসি পদে কর্মরত আছেন। ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের শিগগির যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি হতে পারে। পরে তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বদলি করা হবে। ফলে সংসদ নির্বাচনের সময় ডিসি পদে থাকবেন ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা বেশি প্রাধান্য পাবেন। ২৫তম ব্যাচের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৪ সালে। তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট। ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০০৮ সালের ৩০ নবেম্বর। ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল ২০০৬ সালের ১ নবেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত।

মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে ডিসি হিসেবে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ২২ কর্মকর্তাকে ফেব্রুয়ারিতে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আবার ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন ৩৩ ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে। একইভাবে যারা এসপির দায়িত্বে ছিলেন, তাদেরও বাধ্যতামূলক অবসর ও ওএসডি করা হয়েছে। ফলে এবার নিরপেক্ষ ও সাহসী কর্মকর্তা খোঁজা হচ্ছে।

গেলো ডিসি সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইনের মধ্যে থেকে ডিসিদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওপরের কোনো চাপ এলে সেটা ইসি সামলাবে। কারণ, সুষ্ঠু নির্বাচন করাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য। ডিসি সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ডিসিরা নির্ভয়ে কাজ করতে পারবেন।

চলতি মাসেই যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তারা। তাদের পদোন্নতি দিতে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) কয়েকটি সভা সম্পন্ন করেছে। পদোন্নতির যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসে অথবা ঈদের পরেই পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর ডিসি নিয়োগের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকায় কর্মকর্তা ছিলেন ১০৬ জন। এর মধ্যে ৬১ জনকে ডিসি করার পর বাকি ৪৫ কর্মকর্তা অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকলেও তাদের নানা কারণে গ্রহণযোগ্য মনে করছে না মন্ত্রণালয়। সংসদ নির্বাচনের আগে এসব কর্মকর্তাকে ডিসি পদে পদায়ন সম্ভব নয় বলে গত ১১ জানুয়ারি নতুন তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। তবে এখনও শেষ হয়নি অধিকাংশ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, এবার বিতর্কহীন তালিকা তৈরির কাজ চলছে। নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের ডিসি করা হবে।

নির্বাচন কমিশন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার সময়সীমা অতিক্রম করতে চায় না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেছেন, এই সময়সীমা যাতে পার না হয়, সে জন্য ইসি সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে হলে অক্টোবরেই তপসিল ঘোষণা করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো অল্প সংস্কারের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে একমত হলে আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে নির্বাচন হতে পারে। আর সংস্কার কার্যক্রম প্রসারিত হলে নির্বাচন হবে আরও ছয় মাস পরে।