স্টাফ রিপোর্টার : দেশবাসীর প্রতি মাহে রমযানের পবিত্রতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বিবৃতিতে বলেন, পবিত্র মাহে রমযান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আমাদের সামনে সমাগত। এ মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে রয়েছে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর নামে একটি বরকতময় মহিমান্বিত রাত যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ মাস তাক্বওয়া, সহনশীলতা ও পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস।

গতকাল শুক্রবার দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, জাতি এমন এক সময় পবিত্র মাহে রমযান পালন করতে যাচ্ছে যখন দেশ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়েছে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসা জালিমের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশের জনগণ মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারছে। দেশের নাগরিকগণ ভোটাধিকারসহ সকল মৌলিক মানবাধিকার ফিরে পাবার প্রত্যাশায় আছে। অন্যদিকে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। শান্তি-স্বস্তির নতুন বাংলাদেশ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসর অসৎ ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ইফতার সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি করার সুযোগ যেন না পায় সেদিকে অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অসৎ ব্যবসায়ীদের সকল সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। সুষ্ঠু ও সুপরিকল্পিত বাজারব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। দরিদ্র লোকরা যেন পবিত্র মাহে রমযানের সিয়াম অনায়াসে পালন করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাল, ডাল, তেল, মাছ, গোশত, তরি-তরকারি, চিনি, খেজুর, ছোলা, মুড়ি ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

দিনের বেলা হোটেল, রেস্তোরাঁ বন্ধসহ সকল অশ্লীলতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে দেশবাসীকে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের শিক্ষার আলোকে সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে পবিত্র রমযান মাসকে প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে গ্রহণ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

ইসলামী ছাত্রীসংস্থার থানা দায়িত্বশীলাদের শিক্ষাশিবির: জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ইসলামী ছাত্রীসংস্থার দায়িত্বশীলা শিক্ষাশিবিরে বলেছেন, ইসলামী ছাত্রীসংস্থার সর্বস্তরের দায়িত্বশীলাদের নিজেদের কাজ বুঝে নিয়ে দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। সব ধরনের পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপরই ভরসা করতে হবে। আমরা যত বেশি তাওয়াক্কুল করব, তত বেশি আল্লাহর সাহায্য আসবে। আল্লাহর উপর ভরসা না করে পারিপার্শ্বিক অন্য কিছুর উপর নির্ভর করা চিন্তার ত্রুটি।

গতকাল শুক্রবার ইসলামী ছাত্রীসংস্থার ঢাকা মহানগরী অঞ্চলের সদস্যসহ থানা দায়িত্বশীলাদের এক শিক্ষা শিবির আল ফালাহ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামী ছাত্রীসংস্থার কেন্দ্রীয় সভানেত্রী মুনজিয়ার সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল উম্মে আরওয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত এ কথা বলেন। শিক্ষাশিবিরে বিষয় ভিত্তিক বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোঃ সেলিম উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী জামায়াতের মহিলা বিভাগীয় সেক্রেটারি আয়শা সিদ্দিকা পারভিন, জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগীয় কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ইরানি আক্তার।

আমীরে জামায়াত ছাত্রীদের নিম্নোক্ত বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। দাওয়াত ইলাল্লাহ বিষয়ে তিনি বলেন, মুসলিম-অমুসলিম সবার নিকট দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। ইসলামী সমাজব্যবস্থার সুফল সবার সামনে বলিষ্ঠ যুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। অনুকূল ও প্রতিকূল সর্বাবস্থায় দাওয়াতি কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। মৌখিক ও আমলি- এ দুইটি পদ্ধতিতে দাওয়াত দানের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আমলি দাওয়াত সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী হয়। রাসূল সা. এর জীবন তার সর্বোত্তম নমুনা। এক্ষেত্রে আমাদের আচরণ সুন্দর করতে হবে। মেজাজের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। যারা ইসলামের ব্যাপারে জানতে চাইবে, তাদের নিকট কুরআন সুন্নাহর আলোকে দরদী ভাষায় যুক্তি নির্ভর দাওয়াত পেশ করতে হবে। সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে অংশ নেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ছাত্রীদের পারিবারিক ও আর্থিক সমস্যাসহ সম্ভাব্য সকল সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রের অসৎ নেতৃত্ব পরিবর্তনের ওপর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবর্তন আনয়নে ছাত্রীদের বিশেষ নজর দিতে হবে। পাশাপাশি নিজেদের শিক্ষাজীবনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।