স্টাফ রিপোর্টার : আজ রোববার স্বাধীনতার মাস মার্চের দ্বিতীয় দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় ছাত্র-জনতার বিশাল সমাবেশে গাঢ় সবুজের মাঝে লাল বৃত্তে বাংলাদেশের সোনালী মানচিত্র খচিত স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রী সংসদ (ডাকসু)-এর ভিপি আ স ম আব্দুর রব স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে যখন পতাকা উত্তোলন করেন, তখন বটতলা ছিল জনসমুদ্র। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে নতুন গতি সঞ্চারিত হয়। সংগ্রাম পরিষদে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন আব্দুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী ও শাজাহান সিরাজ। এই পতাকা উত্তোলনের খবর ছড়িয়ে পড়লে দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট, সচিবালয়সহ সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
পতাকা ডিজাইনের পরিকল্পনায় ছিলেন মনিরুল ইসলাম মার্শাল গনি, কাজী আরেফ আহমেদ ও শাজাহান সিরাজ। ১৯৭১ সালের আজকের দিনটি ছিল মঙ্গলবার। সেদিন সারাদেশ ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। গণরোষের শিকার গবর্নর হাউজ পাহারার জন্য হেলিকপ্টারে সৈন্য এনে সেখানে মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকায় কারফিউ জারি করা হয়। স্বাধীনতাকামীদের উদ্বেল-উত্থানকে প্রতিহত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে সামরিক সরকার। সামরিক জান্তার নির্দেশে সেনাবাহিনী মিছিলে নির্বিচারে গুলী চালালে স্বাধীনতাকামী ৬ ব্যক্তি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই মৃত্যু গণআন্দোলনের আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে দেয় দেশের সর্বত্র।
২৬শে মার্চের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনার আগে থেকেই মার্চ জুড়ে সারাদেশ ছিল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে ফেটে পড়ে মানুষ। সে সময়ের দৃশ্য সম্পর্কে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ অলি আহাদ বর্ণনা করেন, জাতীয় পরিষদ মুলতবী ঘোষণায় হতচকিত ঢাকাবাসী স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ঢাকা স্টেডিয়ামের ক্রিকেট ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায়। হাইকোর্ট বার এসোসিয়েশন এবং ঢাকা জেলা বার এসোসিয়েশনের প্রতিবাদ মিছিল রাস্তায় নামে। ছাত্রসমাজ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে নেমে আসে রাজপথে। প্রত্যন্ত শিল্পাঞ্চল হতে শ্রমিকরা দলে দলে মিছিল সহকারে রাজধানী ঢাকা অভিমুখে রওয়ানা দেয়। সকল সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়।