DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজধানী

৫ মে শাপলা চত্বরে যা ঘটেছিল

বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের ৫ মে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কয়েকজন ব্লগারের কটূক্তি করার অভিযোগসহ ১৩ দফা দাবিতে কর্মসূচি দিয়েছিল। হেফাজতে ইসলাম এর ঢাকা অবরোধ এবং শাপলা চত্বরে অবস্থান

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition
shapla_chattar_240922

বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের ৫ মে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কয়েকজন ব্লগারের কটূক্তি করার অভিযোগসহ ১৩ দফা দাবিতে কর্মসূচি দিয়েছিল। হেফাজতে ইসলাম এর ঢাকা অবরোধ এবং শাপলা চত্বরে অবস্থান নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক সহিংসতা চালিয়েছিল। ভোররাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলী চালিয়ে অবস্থানকারীদের শাপলা চত্বর থেকে উঠিয়ে দেয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হন এবং আহত কয়েকশ’ হেফাজত নেতা-কর্মী, আলেম ওলামা এবং মাদ্রাসার ছাত্র।

জানা গেছে, ৫ই মে ২০১৩ ভোর পাঁচটায় ফজরের নামাযের পরই ঢাকার প্রবেশপথগুলো দখলে নিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। ঢাকার উত্তরে গাবতলী বাস টার্মিনাল, টঙ্গী এবং দক্ষিণে সায়দাবাদের কাছে কাঁচপুর ব্রিজসহ রাজধানীকে ঘিরে ছয়টি প্রবেশমুখেই অবরোধ তৈরি করেছিলেন হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সারাদেশ থেকে আসা বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক। বেলা বাড়ার সাথে সাথে অবরোধকারীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। হেফাজতে ইসলামের একজন নেতা দাবি করেন, অনেকটা আকস্মিকভাবেই তারা ঢাকায় প্রবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরআগে হেফাজতে ইসলামের নেতারা শাপলা চত্বরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর অনুমতির জন্য পুলিশের সাথে আলোচনা শুরু করেন। সকালে দফায় দফায় তাদের অলোচনা চলে। সকাল সাড়ে ১১টায় অনুমতি মেলার আগেই কয়েকটি মিছিল ঢুকে পড়ে ঢাকায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, শেষ পর্যন্ত পুলিশ অনুমতি দিয়েছিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার জন্য। এর মধ্যে বেলা বারটার দিকে সংঘর্ষ হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছে । সেখানে হেফাজতে ইসলামের মিছিলে আওয়ামী লীগের একদল নেতা কর্মী হামলা চালায়। কিন্তু অন্যদিকে, পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকারম মসজিদের চারপাশের রাস্তায় বিভিন্ন ভবনে অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ সহিংসতা চলতে থাকে। পুলিশও দফায় দফায় গুলী চালায়। যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল গোটা এলাকা। দিনের এই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহতও হয়। তবে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায় শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাদের বক্তব্যে সেখানে অবস্থান করার ঘোষণা আসতে থাকে। রাত সাড়ে দশটায় হেফাজতে ইসলামের প্রধান শাহ আহমদ শফিকে লালবাগ মাদ্রাসা থেকে নিয়ে শাপলা চত্বরের দিকে রওনা দেয়। পরে তাকেও সেখানে আসতে দেয়া হয়নি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। রাত সোয়া একটায় শুরু হয় সেই রাতের অভিযানের প্রস্তুতি। পুলিশ, র‌্যাব,বিজিবির হাজার হাজার সদস্য তখন দৈনিক বাংলার মোড়, দিলকুশা, ফকিরাপুল এবং নটরডেম কলেজের সামনে অবস্থান নিয়েছে। অবস্থানকারীদের সরে পড়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে কমলাপুর ষ্টেশন যাওয়ার রাস্তা এবং বঙ্গভবনের দিকের রাস্তা খোলা রাখা হয়েছিল। অন্য তিন দিক থেকে র‌্যাব , বিজিবি পুলিশ সদস্যরা এগুনোর চেষ্টা করে এবং প্রথমে হাত মাইক ব্যবহার করে অবস্থানকারীদের সরে যেতে বলে। কিন্তু মঞ্চ থেকেও আসতে থাকে উত্তেজনাকর বক্তব্য। ঘণ্টা দেড়েক এভাবে চলে। রাত পৌনে তিনটা। শুরু হয় মূল অভিযান।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তিন দিক থেকে ফাকা গুলী, আর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে থাকে। থেমে থেমে সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করা হয়। শত শত রাউন্ড গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ এবং অন্ধকার এলাকায় এসবের আলোর ঝলকানি মুহূর্তেই ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল। এই অভিযানের নেতৃত্বে থাকা অন্যতম একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, দশ মিনিটেই তারা পৌঁছে যান শাপলা চত্বরে। ট্রাকের উপর ভ্রাম্যমাণ মঞ্চও খালি হয়েছিল মুহূর্তেই। তবে সেই মঞ্চের পাশে একটি ভ্যানের উপর কাফনের কাপড় এবং পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ৮/১০টি লাশ ছিল। পুলিশ পুরো এলাকার দখল নেওয়ার পর বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেওয়াদের বের করে এনে ঐ এলাকা ছেড়ে যেতে সহায়তা করে। দেখা গেছে হেফাজতের শত শত কর্মী সমর্থক মাথার উপর দু’হাত তুলে লাইন ধরে পুলিশের কর্ডনের মধ্য দিয়ে ঐ এলাকা ছেড়ে যান। ভোর চারটা, তখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থেমে ফাঁকা গুলী করেছে এবং তল্লাশি চালিয়েছে আশেপাশের ভবনগুলোতে। ভোর পাঁচটা, পুরো মতিঝিল এলাকার পরিবেশটা একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকার মতো মনে হয়েছিল। দিনের বেলা অন্তত ১১ জন নিহত হয় পুলিশের গুলীতে। তবে রাতের অভিযানে নিহতের সংখ্যা নিয়ে এখনো সঠিক তথ্য জানা যায়নি।