নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ৭-৮টির মতো সুপারিশের বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়ে ঐকমত্য কমিশনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত চিঠি ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের কাছে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশে ভিন্নমত জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে চিঠি পাঠানোর ব্যাপারে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
ইসির মতামতের বিষয়ে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে একটি স্বতন্ত্র কমিশন করার কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, এটির প্রয়োজন নেই।
তিনি আরও বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আসনের সীমানা পুনরায় নির্ধারণের যে ফর্মুলার কথা বলা হয়েছে সেটি হলে শহর অঞ্চলে আসন বেড়ে যাবে। এখানে ইসি মনে করে, ভোটার সংখ্যা, জনসংখ্যা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা বিবেচনা করে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনরায় নির্ধারণ করা উচিত।
ইসি সচিব বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে- ভোটের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সার্টিফাই করার বিষয়ে একটি সুপারিশ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন মনে করে, এটির প্রয়োজন নেই। কারণ ফলাফলের যে গেজেট প্রকাশিত হয় সেটিই সার্টিফিকেশন। নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা ও নির্বাচন কমিশনারদের শাস্তির বিষয়ে সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করেছে তাতেও ভিন্নমত রয়েছে।
ভোটের পর তদন্ত করে দায়ী হলে কমিশনারদের শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে সংস্কার কমিশনে। এ বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, এজন্য একটি ব্যবস্থা এখনই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল হিসেবে রয়েছে। যদি নির্বাচন শেষ হওয়ার পাঁচ বছর বা দশ বছর পর নির্বাচন কমিশনারদের আদালতে দৌড়াতে হয় এটি কি যৌক্তিক হবে? নির্বাচনে জয়ী হবেন একজন; বাকিরা সংক্ষুব্ধ হয়ে যেকোনো অভিযোগই করতে পারেন।
এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা উচিত বলেও কমিশন মত দিয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রবাসীদের ভোট নিয়ে ওআইসির সহায়তা চেয়েছে ইসি : নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, বড় পরিসরে ভোট করতে হলে প্রক্সি ভোটিংয়ের কোনো বিকল্প নেই।
গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে ওআইসিভুক্ত মিশন প্রধানদের মধ্যে ১০টি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি।
বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন, তিন নির্বাচন কমিশনার ও ইসির সিনিয়র সচিব উপস্থিত ছিলেন। এতে আলজেরিয়া, ব্রুনাই, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মরক্কো, পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর কাছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছে নির্বাচন কমিশন। তাছাড়া সক্ষমতা বাড়ানো, অভিজ্ঞতা ও পারস্পরিক মতবিনিময়ের বিষয়ে প্রতিনিধিদের সহায়তা চেয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, উন্নয়ন সহযোগী দেশ বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করা হচ্ছে, মতবিনিময় হচ্ছে। তারাই ধারাবাহিকতায় দেশে ওআইসিভুক্ত দেশের মিশন প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা আজ এসেছিলেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আমাদের বর্তমান কার্যক্রম, গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সব কাজ হাতে নিয়েছি সেসব অবহিত করেছি। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটের ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা আশা করেছি।
এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রবাসী ভোট সংক্রান্ত তারা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। বিশেষ করে কোনো কোনো রাষ্ট্রদূত সহযোগিতার বিষয়ে ও অবজারভার টিম পাঠানোর জন্য তাদের আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরা স্বাগত জানিয়েছি এবং যথাসময়ে এগুলো ফর্মালাইজ করব। ইসির বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে সবাই আগ্রহী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রক্সি ভোট ছাড়া বিকল্প ভাবছে না ইসি।
প্রবাসীদের ভোটে প্রক্সি ভোটিং নিয়ে অনেকের সংশয়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, তিন ধরনের মেথডে আমরা কোনোটাকেই প্রায়োরিটিতে আনিনি। তিনটি মেথডকে (অনলাইন, পোস্টাল ব্যালট ও প্রক্সি ভোটিং) শর্ট লিস্ট করেছি।
পোস্টাল ও অনলাইন বিষয়ে তিনি জানান, পোস্টাল ব্যালটটা বর্তমানে অকার্যকরী। অনলাইন পদ্ধতি নিয়ে আজও তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মিশরের রাষ্ট্রদূত জানালেন তাদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়, তারা চালু করে অনলাইন ভোট বন্ধ করে দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিনিধি বলেছেন, তাদের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা ভালো, পূর্ণাঙ্গভাবে অনলাইনে চালুর অবস্থানে নেই তারা।
প্রক্সি ভোটিংয়ের বিষয়ে কয়েকটি দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের দেশে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে আরেকজনের সহায়তা নিয়ে ভোট দিয়ে থাকেন। জমিজমাও পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। আমাদের এখন মন্দের ভালো খুঁজে বের করতে হবে। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে চাই তাহলে কোনো না কোনো একটা অপশন বা সব অপশনের কম্বিনেশন আমাদের নিতে হবে। আর বড় পরিসরে যদি আমাদের প্রবাসীদের ভোট দেওয়াতে চাই তাহলে প্রক্সি ভোটিং ছাড়া আর কোনো বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। কারণ বাকি যে দুটো বিকল্প রয়েছে এগুলো পাইলটিং পর্যায়ে যাওয়া যাবে, লার্জ স্কেলে ডেপ্লয় হয়ত করা যাবে না।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, আগামী এপ্রিলের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করার পর চূড়ান্ত পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে ইসি।
বৈঠক শেষে ওআইসি প্রতিনিধিদের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ান হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুহাদা ওথমান কথা বলেন।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের একটি বড় সংখ্যক প্রবাসী বসবাস করছেন। এ সরকারের অধীনে সরকারের নির্বাচনী সংস্কার সব সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন করছে মালয়েশিয়া। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ারে আগ্রহী, বিশেষ করে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এবং বিদেশী কর্মীদের বিষয়ে।