মিয়া হোসেন : চাঁদ উঠলেই আজ বা কাল থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমযান। পবিত্র রমযানে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ফলে খেজুরসহ বেশকিছু পণ্যে স্বস্তি এসেছে। তবে সেহরি ও ইফতারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজার এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ইফতারের শরবতে ব্যবহৃত লেবু আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। সেই সাথে শসাসহ সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বৃদ্ধি পাওয়া চালের দাম কমেনি। বেড়েছে আদা-রসুনসহ মুরগির দাম। মাছ-গোশতের দামও কমেনি।

গত দু’দিনে রাজধানীর বাজারে দেখা গেছে, প্রতিবছর রোজা শুরুর আগেই বাজারে খেজুর, চিনি, ছোলা বেসনের মতো পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এবার এই পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। আর এই পণ্যগুলোর দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষই। রমযান-সংশ্লিষ্ট এসব নিত্যপণ্যের দাম না বাড়লেও এরইমধ্যে শসা, লেবু ও বেগুনসহ সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে।

রোজার ঠিক আগ মুহূর্তে লেবুর দাম কয়েকগুণ বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত সপ্তাহেও যে লেবুর দাম ছিল ২০-৩০ টাকা হালি, সেটি এখন কিনতে সর্বনিম্ন গুনতে হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা। আর আকার-আকৃতি, জাত ও মানভেদে হালিপ্রতি লেবু ৮০, ১০০ এমনকি ১২০ টাকাও দাম চাওয়া হচ্ছে।

সরকারি ট্রেডিং সংস্থা টিসিবির তথ্যে দেখা গেছে, সরু ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে। সরু চাল ৭২ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আর মাঝারি চালের দাম ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে বলেও টিসিবি জানিয়েছে। রসুন ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে আর আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা। দারুচিনি, এলাচ ও মুরগির দামও বেড়েছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। দারুচিনি ৫০০ থেকে ৬৮০ টাকা, এলাচ ৪৮০০ থেকে ৫০০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছর রমযান মাসকে কেন্দ্র করে রোজা শুরুর আগেই বাজার উত্তপ্ত থাকে। বাড়তে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য থাকে খেজুর, শসা, লেবু, বেগুন, ছোলা, ডাল, বেসনের মতো পণ্য। সে হিসেবে এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন।

বাজারে দেখা যায়, মানভেদে প্রতি কেজি বাংলা খেজুর ১৮০- ২০০ টাকা, মেডজুল খেজুর ১২০০- ১৬০০ টাকা, আজোয়া খেজুর ৯০০-১৩০০ টাকা, কামরাঙা মরিয়ম খেজুর ৭০০-১৮৫০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ৬০০ টাকা, তিউনেশিয়ার খেজুর ৪৫০ টাকা, কাঁচা খেজুর ৬০০ টাকা, মাশারুক ৭০০-৯০০ টাকা, সুগাই জাতের খেজুর ৯৫০ টাকা, দাবাস খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪৬০- ৫০০ টাকা, জাহিদি ২০০- ৩০০ টাকা এবং বরই খেজুর ৪৫০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খেজুর বিক্রেতারা বলেন, খেজুরের দাম এবছর অনেক কম। যে খেজুর গত বছর ১ হাজার টাকা বিক্রি করেছি সেটা এবার ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করছি।

উল্লেখ্য, এনবিআরের পক্ষ থেকে রমযান মাসে খেজুরকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য খেজুর আমদানির ওপর বিদ্যমান কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ এবং বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে অর্থাৎ মোট করহার ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৮ দশমিক ৭০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর এনবিআরের এই সিদ্ধান্তের ফলেই খুচরা বাজারে কমেছে খেজুরের দাম।

বেড়েছে সব সবজির দাম

রোজাকে কেন্দ্র করে খেজুরের দাম না বাড়লেও বেড়েছে শসা, লেবু, বেগুনের দাম। এগুলোর মধ্যে লেবুর দাম বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। এছাড়াও বাজারে আজকে কয়েকটি সবজি বাদে প্রায় সব সবজির দাম রয়েছে বাড়ন্ত পর্যায়ে। বাজারে প্রতি কেজি টক টমেটো ৩০ টাকা, দেশী গাজর ৩০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৬০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৭০ টাকা, শসা ৪০-৬০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, লাল মুলা ৩০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, পটল ১৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁয়াজকলি ৪০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা, চালকুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ২৫ টাকা, এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা করে।

এক্ষেত্রে এক মাস আগের দামের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে লম্বা বেগুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, সাদা গোল বেগুনের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, কালো গোল বেগুনের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, শসার দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা, শিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, উচ্ছের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, করলার দাম বেড়েছে ৩০ টাকা, শালগমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, ঢেঁড়সের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা, পটলের দাম বেড়েছে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গার দাম বেড়েছে ১০ টাকা, বরবটির দাম বেড়েছে ১০ টাকা, পেঁয়াজকলির দাম বেড়েছে ২০ টাকা, কচুর লতির দাম বেড়েছে ৪০ টাকা, কচুরমুখীর দাম বেড়েছে ২০ টাকা, কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, ধনেপাতার দাম বেড়েছে ৭০ টাকা। আর প্রতি পিসে ফুলকপির দাম বেড়েছে ২০ টাকা, চাল কুমড়ার দাম বেড়েছে ১০ টাকা। আর প্রতি হালিতে লেবুর দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। আসলে শীত শেষ হওয়াতে সবজি কমে আসছে। এ জন্য দাম বেড়েছে বলে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ব্যবসায়ীরা।

এদিকে বাজারে মান ও আকারভেদে প্রতি কেজি নতুন দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। এরমধ্যে ছোট আকারের পেঁয়াজ ৪০ টাকা এবং বড় আকারের পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি নতুন সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা, নতুন লাল আলু ২০-২৫ টাকায়। নতুন বগুড়ার আলু ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নতুন দেশী রসুন ১২০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ২০০-২২০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১৪০ দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত এক মাসের ব্যবধানে এখনও স্বস্তি ফেরেনি গোশতের বাজারে। বরং বেড়েছে গরু ও খাসির গোশতসহ মুরগির গোশতের দাম। বাজারে প্রতি কেজি গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা এবং খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ওজন অনুযায়ী, ব্রয়লার মুরগি ১৯৭- ২১০ টাকা, কক মুরগি ২৭০-২৯৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, দেশী মুরগি ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১২০-১৩৫ টাকা, সাদা ডিম ১২০-১৩০ টাকা।

মাছের বাজারে দেখা গেছে, আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ ১২০০-২৫০০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০- ৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৩৫০-৫০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৬০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১৬০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কৈ মাছ ২০০-১০০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫০০-১০০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৬০০ টাকা, চিতল মাছ ৭০০-১০০০ টাকা, সরপুঁটি মাছ ২৫০-৪০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুদি দোকানে অধিকাংশ মুদি পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। তবে দাম অপরিবর্তিত থাকলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সয়াবিন তেল। সয়াবিন তেলের সংকটে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বরাবরের মতো ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষেরই অভিযোগ তারা তেল পাচ্ছেন না। বিক্রেতারা বলছেন, তারা বিক্রির জন্য পর্যাপ্ত তেল পাচ্ছেন না। আর ক্রেতারা বলছেন, তাদের তেলের জন্য প্রতিনিয়ত ঘুরতে হচ্ছে এ দোকান থেকে সে দোকানে। আবার শুধু তেল তারা কিনতে পারছেন না, সঙ্গে নিতে হচ্ছে অন্যান্য পণ্য। বাজারে প্রতি কেজি বুটের বেসন ১৪০ টাকা, অ্যাংকর বেসন ৮০-৯০ টাকা, ছোট মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১২০ টাকা, মাশকলাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১২০ টাকা, প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মানভেদে ১১০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা, খোলা চিনি ১২০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।