DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজধানী

পবিত্র মাহে রমযান শুরু

বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রমযান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আজ রোববার থেকে পবিত্র রমযান মাস শুরু হয়েছে।

Printed Edition

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রমযান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আজ রোববার থেকে পবিত্র রমযান মাস শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার এশার নামাযের সঙ্গে তারাবির নামায আদায়ের মাধ্যমে রমযানের কার্যক্রম শুরু করেছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। ভোর রাতে সেহরি খেয়ে প্রথম রোযা পালন করছেন তারা। এদিকে পবিত্র রমযান উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে রমযানের চাঁদ দেখার খবর পাওয়া গেছে বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি।

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রমযান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ১৫ জেলা থেকে চাঁদ দেখার খবর এরই মধ্যে আমাদের হাতে এসেছে। রোববার, ২ মার্চ থেকে পবিত্র রমযান মাস গণনা শুরু হবে। এছাড়া ২৭ মার্চ বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে।

এর আগে বাদ মাগরিব জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা বসে। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। সভা থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রমযান মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়গুলো, আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রমযান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এ অবস্থায় ২ মার্চ রোববার থেকে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রমযান মাস গণনা শুরু হবে।

সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আ. ছালাম খান, তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা নিজামূল কবীর, বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের প্রশাসক ফখরুল ইসলাম, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাইফুল ইসলাম, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. ইব্রাহিম ভূঞা, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আ. রহমান খান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের অতিরিক্ত পরিচালক রুহুল আমিন, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ আশরাফুল কবীর, লালবাগ শাহী জামে মসজিদের খতিব মোহাম্মদ নেয়ামতুল্লাহ, চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি শেখ নাঈম রেজওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার বাণী: পবিত্র মাহে রমযান উপলক্ষে দেশবাসীসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

এক বাণীতে তিনি বলেছেন, সিয়াম সাধনা ও সংযমের মাস মাহে রমযান আজ আমাদের মাঝে সমাগত। পবিত্র এ মাসে আত্মসংযমের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে, সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্য লাভ ও ক্ষমা লাভের অপূর্ব সুযোগ হয়। সিয়াম ধনী-গরিব সবার মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে।

আসুন, পবিত্র মাহে রমযানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যাবতীয় ভোগ-বিলাস, হিংসা-বিদ্বেষ ও সংঘাত পরিহার করি এবং জীবনের সর্বস্তরের পরিমিতিবোধ, ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে রমযানের পবিত্রতা রক্ষা করি। সিয়াম পালনের পাশাপাশি বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করি এবং ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকি।

মহান আল্লাহ আমাদের জাতীয় জীবনে পবিত্র মাহে রমযানের শিক্ষা কার্যকর করার তাওফিক দান করুন। মাহে রমযান আমাদের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে ক্ষমা ও হেফাজত করুন, আমিন।

রমযানের পবিত্রতা বজায় রাখতে আমীরে জামায়াতের আহ্বান : দেশবাসীর প্রতি মাহে রমযানের পবিত্রতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বিবৃতিতে বলেন, পবিত্র মাহে রমযান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আমাদের সামনে সমাগত। এ মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে রয়েছে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর নামে একটি বরকতময় মহিমান্বিত রাত যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ মাস তাক্বওয়া, সহনশীলতা ও পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস।

শুক্রবার দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, জাতি এমন এক সময় পবিত্র মাহে রমযান পালন করতে যাচ্ছে যখন দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসা জালিমের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশের জনগণ মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারছে। দেশের নাগরিকগণ ভোটাধিকারসহ সকল মৌলিক মানবাধিকার ফিরে পাবার প্রত্যাশায় আছে। অন্যদিকে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। শান্তি-স্বস্তির নতুন বাংলাদেশ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসর অসৎ ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ইফতার সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি করার সুযোগ যেন না পায় সেদিকে অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অসৎ ব্যবসায়ীদের সকল সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। সুষ্ঠু ও সুপরিকল্পিত বাজারব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। দরিদ্র লোকরা যেন পবিত্র মাহে রমযানের সিয়াম অনায়াসে পালন করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাল, ডাল, তেল, মাছ, গোশত, তরি-তরকারি, চিনি, খেজুর, ছোলা, মুড়ি ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য জনগণের ক্রয় সীমার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

দিনের বেলা হোটেল, রেস্তোরাঁ বন্ধসহ সকল অশ্লীলতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে দেশবাসীকে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের শিক্ষার আলোকে সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে পবিত্র রমযান মাসকে প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে গ্রহণ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

তারেক রহমানের শুভেচ্ছা: পবিত্র মাহে রমযান উপলক্ষে মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শনিবার এক বাণীতে তিনি বলেন, রোববার থকে পবিত্র মাহে রমযান শুরু। এ পবিত্র মাস আত্মসংযম সাধনার মাস। তাই মুসলিম উম্মাহ পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি লাভে নিজেদেরকে এক অনন্য প্রশিক্ষণে আত্মনিবেদিত রাখেন।

তারেক রহমান বলেন, দেশ ও সারা দুনিয়ার মুসলমান রমযান মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে নিজেদের আত্মার বিশুদ্ধতা অর্জনে আত্মনিবিষ্ট হয়। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস হিসেবে এই মাসটি সম্মানিত। সারাদিন সকল ধরণের পানাহার থেকে মুক্ত হয়ে মোমিন মুসলমানরা আল্লাহর ভালবাসা অর্জন করেন। রমযানের মূল প্রতিপাদ্য আল কোরআন। এ মাসে প্রতিটি নেক আমলে ফজিলত বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, রমযান মাসই হলো সেই মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। হাদিস অনুযায়ী এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।

তিনি বলেন, অনাচার, হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি পরিহার করে সমাজে শান্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। মাহে রমযান প্রতিটি মুসলমানের জীবনে বয়ে আনুক শান্তি-সুখের বার্তা, সবার জীবন হয়ে উঠুক মঙ্গলময়, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে আমি এ প্রার্থনা জানাই।

পবিত্র মাহে রমযান উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অপর এক বাণীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলমানদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান।

চরমোনাই পীরের আহ্বান : পবিত্র রমযানে নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও যানজট নিরসনকল্পে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে সরকারকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, মাহে রমযানের পবিত্রতা রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে মুসলিম উম্মাহকে সিয়াম সাধনায় সুযোগ করে দেয়া সরকারের দায়িত্ব। সেইসাথে দেশময় আইন শৃঙ্খলার যে অবনতি, চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি তা বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করা। অন্যথায় এই সরকারের দ্বারা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হবে।

শনিবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলনের আমীর বলেন, রমযানে যানজট নিরসনসহ সারাদেশে যোগাযোগব্যবস্থায় জনভোগান্তি দূর করতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। মুফতী রেজাউল করীম বলেন, রমযান মাসে ট্রাফিক জ্যাম নিরসনে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে হবে। একই সাথে সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, মিথ্যা, পাপাচার, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, হত্যা, ধর্ষণ, জুলুম, নির্যাতনের অবসান ঘটাতে হবে।

তিনি বলেন, রমযান মাসের সম্মানে বিশ্বের অনেক অমুসলিম দেশেও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর নজির আছে। ব্যতিক্রম এই দেশে। রমযান মাস এলে কৃত্রিমভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির একটা আশঙ্কা তৈরি হয়, অপরাধী চক্র সক্রিয় হয় ছিনতাই, চুরি, ডাকাতিসহ নানা নৈরাজ্য কর্মকাণ্ডে। অতীতে সরকারের মদদপুষ্ট সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজ গ্রুপ ও দলীয় সন্ত্রাসীরা জড়িত থাকত। বর্তমান অর্ন্তর্বতী সরকার নির্দিষ্ট কোনো দলের সরকার নয়। তাদের মদদপুষ্ট সিন্ডিকেট বা চাঁদাবাজ গ্রুপ নেই। তাহলে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় কিসের?। তিনি মাহে রমযানের সম্মান রক্ষায় সবধরনের অশ্লীলতা বন্ধ, দিনের বেলা হোটেল রেস্তোঁরা বন্ধসহ সকল অন্যায় অপকর্ম রুখে দিতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিষয়সমূহ