রাজধানী
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি
তারুণ্যের দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি’র আত্মপ্রকাশ আজ
রাত পোহালেই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে তারুণ্যের রাজনৈতিক দল ‘ন্যশানাল সিটিজেন পাটি’ (এনসিপি)। জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা মানিক মিয়া এভিনিউ’তে বিশাল সমাবেশ করে দলের কমিটি’র আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে।
Printed Edition
রাত পোহালেই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে তারুণ্যের রাজনৈতিক দল ‘ন্যশানাল সিটিজেন পাটি’ (এনসিপি)। জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা মানিক মিয়া এভিনিউ’তে বিশাল সমাবেশ করে দলের কমিটি’র আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে। নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা থেকে সদ্য পদত্যাগ করা নাহিদ ইসলাম। সদস্য সচিব হিসেবে থাকছেন ডাকসুর সাবেক নেতা আখতার হোসেন। অন্যদের মধ্যে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে প্রধান সমন্বয়কারী, সামান্তা শারমিনকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, হাসনাত আবদুল্লাহকে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক, সারজিস আলমকে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক, আবদুল হান্নান মাসউদকে যুগ্ম সমন্বয়ক ও সালেহ উদ্দিন সিফাতকে দপ্তর সম্পাদক পদে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে দৈনিক সংগ্রামকে জানিয়েছেন আত্মপ্রকাশ হতে যাওয়া ‘ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি’র সম্ভাব্য সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, আমরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যাপারে দেশবাসীর কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। সারা বাংলাদেশ থেকে মানুষ আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সবাই আসতে চাচ্ছে, সবাই জানতে চাচ্ছে। আমাদের দল নিয়েও সবার মধ্যে আগ্রহ রয়েছে। যেহেতু তরুণদের নেতৃত্বে দলটি গঠন হচ্ছে এবং আমরা ইতিহাসের স্তরে স্তরে আমরা দেখেছি যে মানুষের যে গণআকক্সক্ষা তৈরি হয় তা রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে সেগুলো প্রতিফলিত হয়নি। ইতিহাসের স্তরে স্তরে মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। মানুষের আকাক্সক্ষা আমাদেরকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে। সেটি ইতিবাচক এবং সেটি নিয়ে মানুষের আগ্রহ, উৎসাহ এবং কৌতূহল রয়েছে এবং সারা বাংলাদেশ থেকে আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি।
এসময় সারজিস আলম জানান, নেতৃত্বের জায়গা থেকে শুরু করে সবকিছু অফিসিয়েলি সমাবেশ থেকে জানানো হবে। আমরা মনে করি যে, আমাদের কথা শুনতে এবং সবাই আমাদের সাথে যোগ দিবে। আমরা প্রত্যাশা করছি সমাবেশে কয়েক লক্ষ মানুষের সমাবেশ হবে। তাদের সামনে আমরা বলতে চাই এবং আমরা বিশ্বাস করি অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় বাংলাদেশে রিমার্কেবল পরিবর্তন এসেছে। এই যে ইয়াং জেনারেশন, যাদের সামনে রেখে একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে; তাদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থীও মনে করতো না। আগামীকাল বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ও ছাত্র-জনতাকে একসাথে দেখে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার কথা ভাবছে, বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার কথা ভাবছে। সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি এই অভূতপূর্ব সাড়া এবং তাদের প্রত্যাশার পারদ সব সময় বজায় রেখে সততা, ন্যায়, দেশপ্রেমকে সামনে রেখে দেশ এবং দেশের মানুষের প্রায়োরিটি সবার আগে রেখে আমরা কাজ করবো।
এক প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম বলেন, আমরা যে জায়গায় বাংলাদেশকে দেখতে চাই, সেই জায়গাতে দেখার অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা। সেই জায়গা থেকে আমাদের সদস নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে চলে গিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের সমাবেশে সকলেই আসবেন। এবং আগামী ৫/১০ বছর পর আমরা যদি দেখি নতুন রাজনৈতিক দল আসছে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদেরকেও পজেটিভ সাপোর্ট, আমাদের জায়গা থেকে করবো।
তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় কৃতজ্ঞতা যাদের কাছে- শহীদ পরিবার, আহত যোদ্ধারা, দেশী বিদেশী আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা থাকবেন, আর আমরা প্রত্যাশা করি যে সকলের সমন্বিত অংশগ্রহণে অলিখিত একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশে এই প্রথম একটি রাজনৈতিক দল রাজনীতির অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি করে নিবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন আমাদের নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে অনেকে যুক্ত হবে, অনেকে যুক্ত হয়ে চলে যাবে সেটাতো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। অল্প সময়ের মধ্যে নতুন দল নির্বাচনের উপযোগী হতে পারবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা রাজনৈতিক ম্যান্ডেট নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাবো। আমাদের কিছু কর্ম প্রক্রিয়া থাকবে। কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে আমরা মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হবো এবং সেটার মধ্য দিয়ে যে ইলেকট্ররাল প্রসেস আছে। তবে রাজনৈতিক দলের একটা চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে, সেটির দিকে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।
অবশ্য বৃহস্পতিবার ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)’ লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন সারজিস আলম। পোস্টের নিচে কমেন্টে উল্লেখ করেন ‘আগামীকাল সারা বাংলাদেশ থেকে এই নামে ব্যানার আসবে। এই নামে মুখরিত হোক বাংলাদেশ।’ আগামীকাল শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিউনিউতে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হবে। তাই ধারণা করা হচ্ছে নতুন দলের নাম এটি হতে যাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রন : জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল ‘ন্যাশনাল সিটিজে পার্টি’র (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানিয়েছেন আব্দুল হান্নান মাসুদ। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘২৪ পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র দিলাম, আর দোয়া নিলাম।’
দৈনিক সংগ্রামের তিনটি রিপোর্ট : নতুন রাজনৈতিক দলে গঠন প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করে আসছিল দৈনিক সংগ্রাম। কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সাথে আলাপ করে নাহিদ ইসলাম ও আখতার হোসেনের নেতৃত্বে নতুন দল আসছে বলে সংবাদ প্রচার করে দৈনিক সংগ্রাম। সেইসাথে পবিত্র রমযানের আগেই আসছে নতুন রাজনৈতিক দল শিরোনামে সবার আগে সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক সংগ্রাম। আরেকটি বিষয় হলো ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি প্রকাশের ব্যাপারেও দৈনিক সংগ্রাম প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত জানা যায় যে আজ ১৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে।