DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজধানী

হাসিনাকে ফেরত চাওয়া চিঠির জবাব এখনো দেয়নি ভারত

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের মন্তব্য অযাচিত-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের মন্তব্য অযাচিত। তিনি আরও বলেছেন, গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী পানির ভাগাভাগি ঠিকভাবেই হচ্ছে। তবে চুক্তি বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হলেও এবার গঙ্গার পানি প্রবাহ কম সে বিষয়ে বাংলাদেশ উদ্বেগ জানিয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের মন্তব্য অযাচিত। তিনি আরও বলেছেন, গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী পানির ভাগাভাগি ঠিকভাবেই হচ্ছে। তবে চুক্তি বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হলেও এবার গঙ্গার পানি প্রবাহ কম সে বিষয়ে বাংলাদেশ উদ্বেগ জানিয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়াও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ফেরত চেয়ে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রায় তিন মাস কেটে গেলেও এখনো তার জবাব দেয়নি ভারত।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বাংলাদেশ ইস্যুতে করা মন্তব্য নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, গত ৭ মার্চ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের মন্তব্যের বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও সংখ্যালঘু সম্পর্কিত বিষয়সমূহ নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে। বাংলাদেশ মনে করে, এ বিষয়গুলো একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এ ধরনের মন্তব্য অযাচিত ও অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপের শামিল। এই ধরনের মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বাস্তবতার ভুল প্রতিফলন বলেও উল্লেখ করেন রফিকুল আলম।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ এবং গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ সকল দেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা আশা করি যে, ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ধরনের মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গত ৭ মার্চ কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল। বাংলাদেশ বিরোধী ভারতীয় অপপ্রচার বন্ধে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করণীয় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রফিকুল আলম বলেন, ভারতীয় অপপ্রচার যা আমরা দেখছি তার বেশিরভাগ বেসরকারি পর্যায়ের। বিভিন্ন মিডিয়া হাউস তাদের নিজেদের মতো করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ ধরনের অপপ্রচার সঠিকভাবে মোকাবিলা করা খুব একটা সহজ ব্যাপার না। কিন্তু এ বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবেচনার মধ্যে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মুখপাত্র জানান, গত ৬-৭ মার্চ কলকাতায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ৬ মার্চ ফারাক্কায় গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সম্পর্কিত যৌথ কমিটির ৮৬-তম সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং ৭ তারিখে কারিগরি পর্যায়ের বৈঠক হয়। এটি দু দেশের মধ্যকার নিয়মিত বৈঠক। গত বছর নবেম্বরে ফারাক্কায় গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সম্পর্কিত যৌথ কমিটির ৮৫তম সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর তা কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে গঙ্গার পানি বণ্টনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। অন্যদিকে, কারিগরি পর্যায়ের সভায় দু দেশের মধ্যে আন্তঃ-সীমান্ত নদী-বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এবারও তাই হয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে গঙ্গা চুক্তি বাস্তবায়নের পর থেকেই প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশের চার সদস্যের দল এবং ভারতের চার সদস্যের দলের উপস্থিতিতে প্রতিদিন চারবার গঙ্গার পানি মাপা হয় এবং চুক্তি অনুযায়ী যার যতটুকু পানি পাওয়ার, তা ভাগ করে নেয়। আর এ বিষয়গুলো ঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা পর্যালোচনা করতে দিল্লী ও ঢাকা থেকে উচ্চপর্যায়ের কমিটি যায় এবং চুক্তি ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না বা আমরা যতটুকু পানি পাওয়ার কথা, তা পাচ্ছি কি না, সে বিষয়গুলোই তখন পরীক্ষা করা হয়। কারিগরি দলের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পানির ভাগাভাগি গাইডলাইন অনুযায়ী ঠিকভাবেই হচ্ছে। তবে চুক্তি বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হলেও এবার গঙ্গার পানি প্রবাহ কম সে বিষয়ে বাংলাদেশ উদ্বেগ জানিয়েছে এবং এ ব্যাপারে ভারতকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য দেশের জন্য বিপদজ্জনক। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য কী? জবাবে মুখপাত্র বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দেওয়ার পর আমাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ থাকে না। শেখ হাসিনা প্রত্যাবর্তনে ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক পত্রের জবাব দিয়েছে কি না এবং না দিয়ে থাকলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল আলম বলেন, এটার বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে জবাব দিয়েছেন। তারপরও আমরা বলছি, আমরা ভারতের কাছ থেকে কোনো জবাব পাইনি। পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা পাবলিকলি একটা দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে দিল্লীর বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক পত্র পাঠানো হয়। চিঠির দেওয়ার পর থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে আসছে, শেখ হাসিনাকে ফেরত পেতে ভারতের চিঠির জন্য অপেক্ষা করবে বাংলাদেশ। ভারতের কাছ থেকে চিঠির জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত সে দেশেই অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা।