রাজধানী
রহমত মাগফিরাত নাজাতের মাস রমযান
অসংখ্য ঘটনাবহুল মাসের নাম পবিত্র রমযান। পবিত্র রমযানের অন্যতম ঘটনা হলো পবিত্র কুরআন নাজিলের ঘটনা। এ ছাড়াও ইসলামের ইতিহাসে অনেক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দীর্ঘদিন হেরাগুহায় অবস্থান ও ধ্যানমগ্ন থাকার পর প্রথম অহি ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযী খালাক...’ এই রমযান মাসে নাজিল হয়।
Printed Edition

মিয়া হোসেন : অসংখ্য ঘটনাবহুল মাসের নাম পবিত্র রমযান। পবিত্র রমযানের অন্যতম ঘটনা হলো পবিত্র কুরআন নাজিলের ঘটনা। এ ছাড়াও ইসলামের ইতিহাসে অনেক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দীর্ঘদিন হেরাগুহায় অবস্থান ও ধ্যানমগ্ন থাকার পর প্রথম অহি ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযী খালাক...’ এই রমযান মাসে নাজিল হয়।
নবী করিম (সা.)-এর ৪০ বছর বয়সে ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ‘লাইলাতুল কদরে’ হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকাকালে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর মারফত আল্লাহর কাছ থেকে প্রত্যক্ষ অহিযোগে প্রথম ‘আল-কুরআন’ অবতীর্ণ হয়। হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.)-এর প্রতি সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে ওহি অবতরণের সূচনা হয়েছিল। অতঃপর তাঁর মধ্যে নির্জনে উপাসনা করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তখন তিনি হেরা গুহায় রজনীর পর রজনী আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন। এ অবস্থায় মাহে রমযানের এক বিশেষ রজনীতে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) কর্তৃক তাঁর কাছে পাঁচটি আয়াত প্রথম অবতীর্ণ হয়, ‘পড়ো! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে এঁটে থাকা বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন। পড়ো! আর তোমার প্রতিপালকই সর্বাধিক সম্মানিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’ (সূরা আল-আলাক, আয়াত: ১-৫) দশম হিজরিতে বিদায় হজে¦র সময় আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি সর্বশেষ ওহি অবতীর্ণ হয়, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম পূর্ণাঙ্গ করলাম আর তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৩)
পবিত্র কুরআনের সঙ্গে রমযান মাসের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা মাহে রমযানে আল-কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং কদরের রাতকেই বেছে নিয়েছিলেন। আল-কুরআনে রয়েছে বিশ্বমানবতার জন্য চির শান্তি ও মুক্তির মহান পয়গাম। আল-কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা নিজেই গ্রহণ করে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষণকারী।’ (সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমযান মাসে কুরআন নিয়ে গবেষণা করতেন এবং মুখস্থ অংশ পুনরায় পড়তেন। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, ‘রমযান শরীফের প্রতি রাতে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) নবী করিম (সা.)-এর খেদমতে হাজির হতেন এবং তাঁরা উভয়ই কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করে একে অপরকে শোনাতেন।’ (বুখারী) রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে রমযান মাসে বেশি বেশি পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের আহ্বান করেছেন। মাহে রমযানে মাতৃভাষায় আল-কুরআনের মর্মবাণী উপলব্ধি, গবেষণা ও চর্চা করা উচিত। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, ‘যদি কেউ আল্লাহর সঙ্গে বাক্যালাপ করার ইচ্ছা করে, তাহলে সে যেন আল-কুরআন তিলাওয়াত করে।’ নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর পাঠ করে, সে একটি নেকি পায়, আর প্রতিটি নেকি ১০টি নেকির সমান।’ (তিরমিযী)
পবিত্র কুরআন এক পরশমনি। এ কুরআনের স্পর্শে যারা এসেছে তারা সম্মানিত হয়েছে। হযরত ওমর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে রাসূল (সাঃ) এর বিরোধিতা শুরু করে। পরবর্তীতে কুরআনের সংস্পর্শে এসে তিনি বিশ্বের মহান নেতৃত্বের আসনে আসীন হন। ইতিহাসে তিনি সফল প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। অপরদিকে যারা পবিত্র কুরআনের বিরোধিতা করেছে এবং কুরআনের সাথে বেয়াদবী করেছে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়েছে এবং ইতিহাসে তাদের নাম কালো অধ্যায়ে রচিত আছে। পবিত্র কুরআনে প্রত্যেকের খোরাক রয়েছে। এখান থেকে যে কেউ তার প্রয়োজনীয় তথ্য ও স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। পবিত্র কুরআনের ভাষা এক অনন্য সাহিত্য ভান্ডার। যার কাছে পৃথিবীর সকল সাহিত্য আত্মসর্মপণ করতে বাধ্য। পবিত্র কুরআন এক মহাবিজ্ঞান গ্রন্থ। বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানীরা এ গ্রন্থ গবেষণা করে অনেক কিছু আবিষ্কার করছেন। এ গ্রন্থের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। আজো যারা পবিত্র কুরআন মেনে চলে এবং পরিবারে কুরআনকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে তাদের জীবনে শান্তি আসবে। প্রত্যেকেরই পবিত্র কুরআন মেনে চলা উচিত এবং কুরআনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করা কর্তব্য। আর কুরআন নাযিলের এই মাসে এ দায়িত্ব পালনের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।