DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজধানী

ছাত্র-জনতার বিপ্লব : গৌরব গাথা

পুলিশের বুলেট শহীদ মাহাদীর বুক ভেদ করে বেরিয়ে যায়

পাঁচ আগস্ট ২০২৪ উত্তরায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন শহীদ মাহমুদুল হাসান মাহাদী। পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন তিনি।

মুহাম্মদ নূরে আলম
Printed Edition
hafez-mahedi

পাঁচ আগস্ট ২০২৪ উত্তরায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন শহীদ মাহমুদুল হাসান মাহাদী। পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন তিনি। তার বিধবা স্ত্রী ও একটা শিশু সন্তানও রয়েছে। তার শাহাদাতের কারণে পরিবারটি মারাত্মকভাবে আর্থিক অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। শহীদ মাহমুদুল হাসান মাহাদী শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকার সাবেক ছাত্র। সচ্ছল বিত্তবানদের প্রতি তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করেছেন তাঁর মাদরাসার শিক্ষকরা। মাহমুদুল হাসান ছিলেন কুরানের হাফেজ। এ ছাড়াও তিনি মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন। মাহমুদুলের স্ত্রীর নাম বুশরা আক্তার। তাদের রয়েছে ৮ মাসের একমাত্র ছেলে ওসমান হাসান হোজাইফা। বায়না করায় মাহমুদুল হাসান ছোটভাইকে সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। সাইকেল আছে ঠিকই কিন্তু ভাই নেই।

শহীদ মাহমুদুল হাসান মাহদী যেভাবে শহীদ হন: দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবসে (৫ আগস্ট ২০২৪ সোমবার ) শত শত শহীদের তালিকায় আছেন বারিধারার ফুযালা মাওলানা মাহমুদুল হাসান মাহদী। রাজধানীর উত্তরায় পুলিশের গুলীতে শাহাদাত বরণ করেন তিনি। ৫ আগষ্ট ২০২৪ উত্তরা থানা এলাকায় বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পুলিশের গুলীতে ১০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। বিজয় মিছিল শেষে গাজীপুর ফিরে যাওয়ার সময় সন্ধ্যায় পুলিশের গুলীতে মাহমুদুল হাসান মাহদী উত্তরায় গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। একটি বুলেট তার বুকের বাম পাশে লেগে বেরিয়ে যায়। মাহদীকে উদ্ধার করে প্রথমে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়। কিন্তু অপারশনের পরও রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যায়নি। পরের দিন সন্ধ্যায় তিনি দুনিয়া থেকে চির বিদায় গ্রহণ করেন।

মাহদীর লাশ ঢাকা মেডিকেল মর্গ থেকে বারিধারায় নিয়ে আসা হয়। বারিধারায় কিছুক্ষণ রাখার পর তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জানাজার নামাজ শেষে দাফন করা হয়।

অর্থাভাবে অসহায় জীবনযাপন করেন গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মাহাদীর পরিবার: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুল হাসান মাহাদীর পরিবার অর্থাভাবে অসহায় জীবনযাপন করে। স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের সময় উত্তরায় বুলেটে মারা যান মাহমুদুল। তার বাবা-মা দুজনই অসুস্থ। মাহাদীর পিতা আবদুস সাত্তার জানান, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সহায়তা পাননি তারা। সাত সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারটি।

৫ আগস্ট ২০২৪ শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরই সবাইকে দমে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ফেসবুক লাইভ করেন মাহমুদুল হাসান মাহাদী। ওইদিন সকাল থেকেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছিলেন তিনি। স্বৈরাচার পতনের পর বিজয় উৎসবে যোগ দেন মাহাদী। এ সময় ঘাতকের বুলেট তার বুক ভেদ করে বেরিয়ে যায়। মাহমুদুলের বাবা মো. আবদুস সাত্তার জানান, ছেলের আয়েই সংসার চলতো। তিনি ইমামমতি করলেও অসুস্থতার কারণে এখন আর পারেন না। ঘরে স্ত্রীও অসুস্থ। দুই ছেলে এক মেয়ে লেখাপড়া করছে। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে এখনো মামলা করেননি বলেও জানান তিনি।

মাহদী সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত: শহীদ মাহমুদুল হাসান মাহদী সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করতেন, উদিয়মান বক্তাও ছিলেন ,পেশ ইমাম এর দায়িত্ব ছিল তার। রোজায় তার সুমধুর তেল্ওায়াতে মুগ্ধ হত সবাই।