DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজধানী

শাপলা চত্বরে গণহত্যায় গণজাগরণের নেতাকর্মীরা জড়িত - চিফ প্রসিকিউটর

হাসিনা-ইমরান এইচ সরকারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition
hasi

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

শেখ হাসিনা ছাড়াও পরোয়ানাভুক্ত আসামীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার ও বেনজির আহমদ।

অন্য মামলায় কারাগারে থাকায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোল্লা নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৭ নম্বের শাপলা চত্তরের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনকে আসামী করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে অভিযোগ দাখিল করেন হেফাজতে ইসলাম।

অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক এমপি হাজী সেলিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র‌্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহমেদ, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, নির্মূল কমিটির সদস্য অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার, একাত্তর টিভির সাবেক সিইও মোজাম্মেল হক বাবু, সময় টিভির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আহমেদ জোবায়ের, এবিনিউজ২৪ ডটকমের সম্পাদক সুভাস সিংহ রায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ এবং এনএসআইয়ের মো. মনজুর আহমেদকে আসামী করা হয়েছে।

মামলায় বাদীর অভিযোগ, ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে রাত ১১টার দিকে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দেন। এরপর শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে মাদরাসা ছাত্র ও পথচারীদের ওপর গণহত্যা চালায়। পরে লাশ সিটি করপোরেশনের গাড়িতে করে নিয়ে গুম করা হয়। নিহত ব্যক্তিদের পরিবার থানায় মামলা করতে গেলে তা নেয়া হয়নি।

গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা সরাসরি হেফাজতের গণহত্যায় জড়িত ছিল

শাপলা চত্বরে হেফাজতের গণহত্যায় গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীদের সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা সরাসরি হেফাজতের গণহত্যায় জড়িত ছিল বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। হেফাজতের আন্দোলনের মৃত্যুর সংখ্যা কত তা তদন্তাধীন। তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরই নিশ্চিত সংখ্যা বলা যাবে।

তিনি আরও জানান, আগামী ১২ মে ট্রাইব্যুনালে তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে, শাপলা চত্বরের ঘটনায় হেফাজতের করা মামলায় গতকাল বুধবার দুপুরে শেখ হাসিনা ও বেনজীর আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া এই মামলায় চার অভিযুক্ত যারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন, তাদের প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট মূলে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই চারজন হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোল্লা নজরুল ইসলাম।

অন্যদিকে সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল দশজনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর নায়েক মো. সোহেল মিয়া গ্রেপ্তার হলে বুধবার তাকে হাজির করা হয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইবুনাল।

প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। চেয়ারম্যানসহ ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য উপস্থিত ছিলেন। প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ, গাজী এমএইচ তামিম, মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, তারেক আব্দুল্লাহ ও শাইখ মাহাদী।

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গণহত্যার অভিযোগ এনে শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই অভিযোগ করেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা। এই অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ, সাবেক আইজিপি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমসহ সংশ্লিষ্টদের আসামী করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ব্ল্যাকআউট করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতর্কিত হামলায় গুলি করে হত্যা করা হয় শতাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে। পরে সরকারের পক্ষ থেকে শাপলা চত্বরে গুলি করে কাউকে হত্যা করা হয়নি বলে দাবি করে তৎকালীন সরকার। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তারা।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ মে ১৩ দফা দাবিতে শাপলা চত্বরে সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। সেখানে অবস্থান নিয়ে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।