রমযানের প্রথম দিনেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে তীব্র যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিন ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিকালে অফিস ছুটির পর রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মৎস্যভবন, মিন্টোরোড, কাকরাইল, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, রামপুরা, হাতিরঝিল, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, নতুন বাজার এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। মোড়ে মোড়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের।
একদিকে রমযান মাসের শুরু, অন্যদিকে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস। তাই ইফতারের আগে বাসায় ফিরতে কর্মজীবীদের বেশি তাড়া দেখা যায়। কিন্তু যানজটের কারণে তাদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সিয়াম সাধনার এই দিনে মানুষজন বিকেলে কর্মস্থল থেকে নিজ বাসায় গিয়ে পরিবারের সঙ্গে একত্রে ইফতার করতে চান। যে কারণে অফিস ছুটি শেষে বিকেল তিনটার পর ঘরমুখো মানুষজন রাস্তায় বের হয়েছেন। বিভিন্ন যানবাহনে করে তারা নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন। তবে একসঙ্গে অনেক মানুষ বের হওয়ায় ইফতারের আগের সময়টাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যানজট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে রামপুরা এলাকায় যানজট দেখা গেছে বিকেল তিনটার পর।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থী ফারুকুল ইসলাম গহীন বলেন, ক্লাস শেষে খেজুর ও বাদাম কিনতে কারওয়ান বাজারে এসেছি। এখন মিরপুরে বাসায় ফিরে যাব। কিন্তু রাস্তায় যে যানজট ইফতারের আগে পৌঁছাতে পারবো কিনা জানি না।
বাংলামোটরে কথা হয় চাকরিজীবী কাউসার আহমেদের সঙ্গে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রথম রোজা। তাই ভাবলাম, পরিবারের সঙ্গে ইফতার করব। কিন্তু রাস্তায় তো ভয়ংকর যানজট। যদিও প্রতিবছরই ইফতারের আগে আমাদের এই ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এদিকে সড়কে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের ব্যাপক তৎপর দেখা গেছে। কিন্তু একই সময়ে অনেক মানুষ রাস্তায় বের হওয়ায় যানজট সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে দেখা গেছে।
বিকেল তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়,পল্টন থেকে উত্তরাগামী এবং উত্তরা থেকে পল্টনগামী রাস্তায় যান চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোন বড় ধরনের যানজটের তেমন খবর পাওয়া যায়নি। তবে উভয় গন্তব্যের যানবাহনগুলোকে রামপুরা এলাকায় যানজটে পড়তে হয়েছে। উত্তরা থেকে পল্টনগামী যানবাহনগুলোকে যেমন রামপুরায় যানজটে পড়তে হয়েছে, তেমনি পল্টন থেকে উত্তরাগামী যানবাহনকেও রামপুরায় যানজটে পড়তে দেখা গেছে। বলতে গেলে বিকেল তিনটার পর রামপুরা এলাকায় গাড়ি বারবার আটকে যায়।
যানজট সৃষ্টি হলেও রামপুরা এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যথাসম্ভব চেষ্টা করে ট্রাফিক। তারা বলছেন, একসঙ্গে অনেক গাড়ি বের হওয়া এবং রামপুরা ব্রিজ এলাকায় বিভিন্ন দিক থেকে গাড়ি আসার ফলে এখানে কিছুটা গাড়ির চাপ বেড়ে জটলা তৈরি হচ্ছে। যে কারণে যানবাহনকে এখানে কিছু সময় আটকে যেতে হচ্ছে।
যাত্রীরা বলছেন, প্রথম দিনে তেমন কোনো যানজট পাওয়া যায়নি। তবে রামপুরায় গাড়ি কিছুক্ষণ আটকে থাকে। প্রায় ৩০ মিনিটের মতো গাড়ি আটকে থাকে।
এ বিষয়ে ভিক্টর ক্লাসিক বাসের যাত্রী জাহিন উদ্দিন বলেন, আমি পল্টন থেকে বাসে উঠেছি কুড়িল বিশ্বরোডে যাব। পল্টন থেকে গাড়ি মোটামুটি স্বাভাবিকভাবে চলে এসেছে। কিন্তু রামপুরা এসে ৩০ মিনিটের মতো যানজটে পড়ে যায়। রামপুরা ছাড়া বাকি রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। এখন রামপুরা থেকে সামনে রাস্তায় যানজট না থাকলেই হয়।
উত্তর বাড্ডা থেকে মোটরসাইকেলে করে সাইদুর রহমান মালিবাগে নিজ বাসায় যাচ্ছেন। তিনি বলেন, রাস্তা মোটামুটি ক্লিয়ার। তবে রামপুরা এসে অনেকক্ষণ আটকে রয়েছি। এখানে গাড়ির চাপ অনেকটা বেশি। তবে আশা করি দ্রুত গাড়ি চলে যাবে।
রামপুরার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিকের রামপুরা বিভাগের রামপুরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. আরিফুল ইসলাম তত্ত্বাবধান করছেন। তিনি বলেন, রোজার প্রথম দিন সব মানুষ বিকেল তিনটার পর নিজ বাসায় যাচ্ছেন ইফতার করার জন্য। তাই স্বাভাবিকভাবে গাড়ির চাপ একটু বেশি। তবে আমি বলতে পারি অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় আজ রাস্তায় রোজার দিনে যান চলাচল অনেক স্বাভাবিক। তবে রামপুরায় গাড়ির একটু চাপ রয়েছে সে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি যাত্রীদের খুব বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. সরওয়ার বলেন, মানুষ সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঘর থেকে বের হয়। ৯ ঘণ্টায় ধরে যারা বের হয় তারা পরের দুই ঘণ্টায় অর্থাৎ বিকাল ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে ঘরে ফিরতে চায়। যে কারণে রাস্তায় ব্যাপক চাপ পড়ে। এটাই ইফতারের আগে যানজটের মূল কারণ। সকালে কিন্তু তেমন যানজট ছিল না। তারপরও আমরা যানজট নিরসনে চেষ্টা করছি। আমাদের এসসি, ডিসি, এডিসি, যুগ্ম কমিশনার সবাই রাস্তায় আছে। আমি নিজেও রাস্তায় আছি। সাধারণ সময়ের তুলনায় সড়কে ট্রাফিক মোতায়েনও বেশি করা হয়েছে। আশা করি ইফতারের আগেই মানুষকে বাসায় ফিরতে পারবে।