DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজধানী

পূর্বাচল প্লট দুর্নীতি

হাসিনা ও রেহানার পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশীট

‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে’ রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে করা ছয়টি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্য মিলিয়ে সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition
Default Image - DS

‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে’ রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে করা ছয়টি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্য মিলিয়ে সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, গতকাল সোমবার এসব অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়। শিগগিরই সেগুলো আদালতে দাখিল করা হবে।

ছয়টি মামলার আসামীরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।

শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচলে রাজউকের প্রতিটি ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগে মামলাগুলো করেছে দুদক। ছয়টি মামলার মধ্যে গত ১৪ জানুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছেলে জয় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাসহ আসামী মোট আটজন। জয়ের বিরুদ্ধে করা মামলায় তার মাসহ মোট ১৫ জনকে আসামী করা হয়।

অন্যদিকে জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পুরাতন ১৪ আসামীরা হলেন- ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন)কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।

দুদক কর্মকর্তা বলেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালনকালে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল প্রকল্পের কূটনৈতিক এলাকায় ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তায় প্লট নিজের ও ছেলে নামে বরাদ্দ নিয়েছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ‘অনিয়মের’ তথ্য পাওয়ার পর মামলা করেছে সংস্থাটি।

হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে মামলার আগে গত ১২ জানুয়ারি প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। ১৩ জানুয়ারি শেখ রেহানা ও তার ছেলেরা রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে মামলা করে সংস্থাটি। এসব মামলায় শেখ হাসিনাকেও আসামী করা হয়েছে।

এ ছাড়া রেহানা ও তার ছেলে-মেয়ের বিরুদ্ধে করা মামলায় তার আরেক মেয়ে যুক্তরাজ্যের প্রতিন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে আসামী করা হয়।

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। সে দিন ভারতে পালিয়ে যান তিনি। তার পরিবারের অন্যরাও দেশের বাইরে। তারপর ২৬ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশের এলাকায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার ছেলে-মেয়ে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকের নামে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০০৯) বরাদ্দ পেয়েছেন। ২০২২ সালের ৩ অগাস্ট তার নামে রাজউক প্লটের বরাদ্দপত্র দেয়। সজীব ওয়াজেদ জয় (প্লট নম্বর ০১৫) এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও (প্লট নম্বর ০১৭) ১০ কাঠা করে প্লট পেয়েছেন। জয়ের বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর দেওয়া হয় এবং ১০ নবেম্বর মালিকানা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। পুতুলের বরাদ্দপত্র দেওয়া হয় ওই বছরের ২ নবেম্বর। শেখ রেহানাও ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০১৩) বরাদ্দ পেয়েছেন। তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১১) এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১৯) নামেও একই পরিমাণের প্লট বরাদ্দ হয়েছে। তার আগে অক্টোবর মাসে শেখ হাসিনার পরিবারের ছয় সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আসা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় হাই কোর্ট। একইসঙ্গে এ কমিটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে) রাজউকের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগও তদন্ত করতে বলা হয়।

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও দলের শীর্ষ সারির নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, গণহত্যার কয়েক’শ মামলা হয়েছে। জয়, পুতুল, রেহানা ও ববিকেও সহিংসতার ঘটনায় করা মামলার আসামী করা হয়েছে।