পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের আমন্ত্রণে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকায় আসতে পারেন। এই সফরের প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনার জন্য পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক) ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। গতকাল বুধবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি। এ সময় তিনি তৌহিদ হোসেনকে লেখা ইসহাক দারের একটি চিঠি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের হাতে তুলে দেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দুই পক্ষ পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবদের সর্বশেষ বৈঠক ২০১০ সালে এবং যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের শেষ বৈঠকটি হয়েছিল ২০০৫ সালে। আজকের আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের পক্ষে থাকা বাণিজ্যঘাটতি কমাতে সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। দুই পক্ষই পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সাম্প্রতিক সফরে সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে পণ্যনির্দিষ্ট বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সফরের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। পর্যটন খাতে সহযোগিতা, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক বিনিময়, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ইস্যু এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়। সার্ক, ওআইসি ও ডি-৮–এর মাধ্যমে আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের গুরুত্বের কথাও আলোচনায় এসেছে।

এদিকে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো শক্তিশালী ও পর্যালোচনা করতে ঢাকায় সরকারের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি। বৈঠকগুলোতে বৈদেশিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, ভিসা এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগসহ অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দুই দেশের সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। বৈঠকে দুই পক্ষই সম্পর্কের ইতিবাচক অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সহযোগিতা আরও বৃদ্ধিতে একমত হয়েছেন। এ ছাড়া পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন বাংলাদেশ সফর নিয়েও আলোচনা করেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সঙ্গে বৈঠকে উভয় পক্ষই দ্বিপক্ষীয় ভ্রমণ সহজ করার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন ইমরান আহমেদ। দুই দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যকে স্বীকৃতি দিয়ে সামনের দিনে আরও এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রগুলো খতিয়ে দেখার বিষয়ে আলোচনা করেন।

সংস্কৃতিসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্বিপক্ষীয় সংস্কৃতিবিষয়ক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো খতিয়ে দেখেন ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি। এর মধ্যে সংগীত, সিনেমা, নাটক, দুই দেশের তরুণদের মধ্যে সংযোগ এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা করেছেন। উভয়ই দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদারে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।