# পলাতক হাসিনা-কামালকে ফেরাতে ইন্টারপোলে যাবে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্ট’

# রায়ের কপি ডিসির কাছে পাঠানোর পর কার্যকরের উদ্যোগ

# কোথাও নেই আওয়ামী লীগ

ভারতে পলাতক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদ- প্রদানের রায়কে ঐতিহাসিক রায় হিসেবে মনে করছে দেশবাসী। রায়ের আগে ফেসবুকে আওয়ামী লীগের নানা হুমকি-ধামকি থাকলেও রায় ঘোষণার পর কোথাও আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের বিক্ষোভ বা কর্মসূচি লক্ষ্য করা যায়নি। সারাদেশে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অকাট্য প্রমাণের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন ভারত থেকে শেখ হাসিনা ও কামালকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় বাস্তবায়ন করাই বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ইতোমধ্যে রায় বাস্তবায়নের জন্য ট্রাইব্যুনাল ও সরকার প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। রায়ের কপি পাঠানো হবে ডিসির কাছে। সেই সাথে ইন্টারপোলে যাবে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্ট’। সরকারের পক্ষ থেকেও কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ- ও তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ৫ বছরের কারাদ- দিয়েছেন।

এ রায় বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে দ-প্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলে নোটিশ পাঠানো হবে। ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে এই প্রথম এমন কম্পেনসেশনের রায় দেওয়া হয়েছে। এখন এ রায়ের কপি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গেলে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন যে এর কোন অংশ কিভাবে কার্যকর করবেন। তবে পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে আগেই একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ রেড নোটিশ জারির আবেদন করা আছে। এখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বদলে কনভিকশন ওয়ারেন্ট বা সাজার পরোয়ানামূলে ইন্টারপোলে আরেকটি নোটিশ জারির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে। তাদের মাধ্যমে এটা ইন্টারপোলে যাবে। এ নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে প্রসিকিউশন।

তিনি বলেন, পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় ঘোষণা হয়েছে সোমবার। এ রায়ের একটি সার্টিফাইড কপি পাবে প্রসিকিউশন। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার আসামিও পাবেন। এ ছাড়া পলাতকরা যদি ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ বা গ্রেপ্তার হন তাহলে তারাও একটি কপি পাবেন বিনামূল্য। এটার কার্যকরিতার জন্য এ রায়ের আরেকটি কপি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তথা ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে যাবে। এসব রায়ের শেষে উল্লেখ রয়েছে।

কবে নাগাদ রায়ের কপি যাবে; এমন প্রশ্নে প্রসিকিউটর বলেন, সোমবার রায় দেওয়া হয়েছে। এখন এ রায়ের কিছু অফিসিয়াল কার্যক্রম রয়েছে। সেসব সম্পন্ন হলেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চলে যাবে।

এদিকে কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের (সিএসসি) জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সম্মেলনে যোগ দিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের বুধবার দিল্লিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি একদিন আগেই গতকাল মঙ্গলবার ভারতের রাজধানীতে গেছেন বলে জানা গেছে। ধারনা করা হচ্ছে তিনি সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা ও কামালকে ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবেন। এমন কী সরকারের পক্ষ থেকে কোন পত্রও হস্তান্তর করতে পারেন। কেননা রায়ের পর পরই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে ভারতকে চিঠি পাঠানো হবে। আমরা আমাদের অবস্থান সরকারিভাবে ভারতকে জানাবো। চিঠিটি সোমবার রাতে বা মঙ্গলবার সকালে যেভাবেই হোক, পাঠানো হবে। তিনি বলেন- ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন অথবা নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে এই চিঠি পাঠানো হবে। তৌহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশের অনুরোধটি ভারত-বাংলাদেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনেই পাঠানো হবে।

রায়ে আরো যা বলা হয়েছে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়টিই ঐতিহাসিক রায় হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। এ রায়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরা হলো।

পরস্পর যোগসাজশে নৃশংসতা

ঘোষিত রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হত্যার উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন পরস্পর যোগসাজশে ও সহযোগিতায় যৌথভাবে নৃশংসতা ঘটান। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সাক্ষ্যে উন্মোচিত হয় যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর, অতিরিক্ত সচিব, এসবিপ্রধান, ডিবিপ্রধান, র‌্যাব মহাপরিচালক, ঢাকা মহানগর কমিশনার, বিজিবি ও আনসারের মহাপরিচালক, এনটিএমসিপ্রধান, ডিজিএফআই ও এনএসআইপ্রধান সমন্বয়ে কোর কমিটি গঠিত হয়।

২০২৪ সালের ১৯ জুলাইয়ের পর প্রতি রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় তাঁরা বৈঠকে বসতেন। শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোর কমিটির কাছে নির্দেশনা আসত। মামুন আরও বলেছেন, ‘আন্দোলনের একপর্যায়ে ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয় আন্দোলনকারীদের সমবেত হওয়ার স্থান নির্ণয়ে এবং আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের জন্য হেলিকপ্টার ও লেথাল উইপেন ব্যবহার করার বিষয়ে।’ শেখ হাসিনা লেথাল উইপেন ব্যবহার করার নির্দেশ দেন, অতিরিক্ত ডিআইজি জোয়ারদার সেখানে উপস্থিত ছিলেন। লেথাল উইপেন ব্যবহার করার এই বার্তা তিনি সারা দেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠান।

তিনজন নেতৃত্ব দেন, যৌথ অপরাধমূলক উদ্যোগ

তথ্যাদি পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ও জনগণের বিরুদ্ধে অপারেশনে অভিযুক্ত তিনজন যৌথভাবে নেতৃত্ব দেন, জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ (যৌথ অপরাধমূলক উদ্যোগ) হিসেবে। শেখ হাসিনার আদেশের পাশাপাশি আসাদুজ্জামান খান ও আবদুল্লাহ আল মামুনের তত্ত্বাবধানে পরবর্তী সময়ে আইন প্রয়োগকারী এবং আওয়ামী লীগের কর্মী, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সারা দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও জনগণের ওপর আক্রমণ করেছে; যেখানে হেলিকপ্টার ও লেথাল উইপন ব্যবহার করে হয়। যে কারণে প্রায় ১৫০০ লোকের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে ঢাকার চানখাঁরপুলের ছয়জন আন্দোলনকারী এবং আশুলিয়ার অপর ছয়জন আন্দোলনকারী রয়েছেন।

২০২৪ সালের ১৯ জুলাইয়ের পর প্রতি রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় তাঁরা বৈঠকে বসতেন। শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোর কমিটির কাছে নির্দেশনা আসত। মামুন আরও বলেছেন, ‘আন্দোলনের একপর্যায়ে ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয় আন্দোলনকারীদের সমবেত হওয়ার স্থান নির্ণয়ে এবং আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের জন্য হেলিকপ্টার ও লেথাল উইপন ব্যবহার করার বিষয়ে।’

শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য প্ররোচিত করে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য মাকসুদ কামালের সঙ্গে গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার কথোপকথন তুলে ধরে রায়ে বলা হয়, তাতে শেখ হাসিনা বলেন, রাজাকারদের তো ফাঁসি দিয়েছি, এবার তোদেরও (আন্দোলনরত) তাই করব। একটাও ছাড়ব না, আমি (শেখ হাসিনা) বলে দিচ্ছি। এই কথোপকথনে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমি বলে দিচ্ছি, আজকে সহ্য করার পরে অ্যারেস্ট করবে, ধরে নেবে এবং যা অ্যাকশন নেওয়ার নেবে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এটি কাচের মতো স্বচ্ছ শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য তার দলের কর্মী, সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে প্ররোচিত করে। তাঁর বক্তব্য আন্দোলনকারীদের উসকে দেয়। অধিকন্তু এসব বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি আন্দোলনকারীদের হত্যা ও নির্মূল করার আদেশ দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত কথোপকথন ধারণ করা পেনড্রাইভ, সিডি এবং বক্তব্যের অনুলিখন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবি অবমূল্যায়ন করেন শেখ হাসিনা

ঘটনা ও পারিপার্শ্বিকতা পর্যালোচনা করে ঘোষিত রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই আন্দোলন শুরু করে, যা ওই বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলে।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শোনা ও তাঁদের দাবি পূরণের পরিবর্তে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্ডারমাইন দ্য মুভমেন্ট (আন্দোলনকে অবমূল্যায়ন) এবং ‘রাজাকারস' উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অবমাননাকর মন্তব্য করেন, যা বাংলায় গালি। 'মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা চাকরি পাবে না তো রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে' উল্লেখ করেন তিনি। অভিযুক্ত শেখ হাসিনার এই অবমাননাকর মন্তব্যের পরে নারী শিক্ষার্থীসহ শিক্ষার্থীরা সোচ্চার হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমবেত হয়। শেখ হাসিনার ওই শব্দচয়ন করা মন্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান তারা।

রায়ে শেখ হাসিনা ও কামালের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের সকল সম্পদের বিবরণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি। তবে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা ও বিভিন্ন অনুসন্ধানে যেসব সম্পদের খোজঁ জানা গেছে তা তুলে ধরা হলো।

হাসিনার যত সম্পদ

‘ডামি নির্বাচন’ নামে পরিচিত ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে শেখ হাসিনা (গোপালগঞ্জ-৩) ও আসাদুজ্জামান খান কামাল (ঢাকা-১২) হলফনামা জমা দিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাদের ঘোষিত সম্পদের তথ্য জানা যায়। হলফনামায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজের নামে ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছিলেন। তখন নিজের হাতে নগদ অর্থ দেখিয়েছিলেন সাড়ে ২৮ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকার পরিমাণ ছিল প্রায় ২ কোটি ৩৯ লাখ। ছিল ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ৫৫ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর)।

শেখ হাসিনা হলফনামায় তিনটি মোটরগাড়ি দেখিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি উপহারের। সেটির দাম দেখাননি। বাকি দুটির দাম দেখিয়েছিলেন সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা। সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দাম দেখিয়েছিলেন ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। নিজের আসবাবের দাম ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেখিয়েছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা নিজের নামে থাকা কৃষিজমির পরিমাণ দেখিয়েছিলেন ১৫ দশমিক ৩ বিঘা, যার ক্রয়কৃত অংশের মূল্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, যা টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ সদর, গাজীপুর ও রংপুরে। গাজীপুর শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে মৌচাকের তেলিরচালা এলাকায় বাংলাদেশ স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পূর্ব পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ঘেঁষে রয়েছে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের একটি বাগানবাড়ি।

স্থানীয় ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৭০ সালের দিকে স্থানীয় এক ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এ জমি লিখে দিয়েছিলেন। উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক হয়েছেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জমির কিছু অংশ সন্তানদের লিখে দেন। সেই সূত্রে মালিক হন শেখ হাসিনার সন্তান সজীব ওয়াজেদ ও সায়মা ওয়াজেদ এবং শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক। নথিপত্রে জমির পরিমাণ ২৯৭ শতক (৯ বিঘা)। হলফনামা অনুযায়ী, ঢাকার পূর্বাচলে একটি প্লট রয়েছে শেখ হাসিনার নামে, যার দাম ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর নামে এবং তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, ছোট বোন শেখ রেহানা (রেহানা সিদ্দিক), রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের (রূপন্তী) নামে পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে এই পরিবারের ছয়জন মোট ৬০ কাঠা জমি পেয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে এসব প্লট বরাদ্দের অভিযোগে দুদকের মামলা চলছে এখন।

হলফনামায় শেখ হাসিনা তিনতলা ভবনসহ ৬ দশমিক ১০ শতক (আংশিক) জমি নিজের নামে দেখিয়েছেন। এই জমি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। এর অর্জনকালীন মূল্য দেখানো হয়েছে ৫ লাখ টাকা। গাজীপুর শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে মৌচাকের তেলিরচালা এলাকায় বাংলাদেশ স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পূর্ব পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ঘেঁষে রয়েছে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের একটি বাগানবাড়ি।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত ২২ মে এক ব্রিফিংয়ে জানায়, শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী হলফনামায় অসত্য তথ্য দিয়েছিলেন। ওই সময় হলফনামায় তিনি নিজ নামে থাকা জমির পরিমাণ ৬ দশমিক ৫০ একর বলে ঘোষণা দেন। কেনার সময় এ জমির অর্থমূল্য দেখানো হয় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

দুদক বলেছে, তারা যাচাই করে দেখতে পায়, ওই সময় শেখ হাসিনার নামে ২৮ একর ৪১ শতকের বেশি স্থাবর সম্পদ ছিল। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দুদক নির্বাচন কমিশনকে তখন চিঠিও দেয়। ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটির মালিকানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের হাতে রয়েছে। শেখ হাসিনার বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনের মালিকানা রয়েছে সজীব ওয়াজেদ ও সায়মা ওয়াজেদের নামে।

আসাদুজ্জামান কামালের যত সম্পদ

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ঢাকা-১২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি যে হলফনামা দিয়েছিলেন, তাতে ঘোষিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।

আসাদুজ্জামান খান হাতে নগদ দেখিয়েছিলেন ৮৪ লাখ টাকার কিছু বেশি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা দেখান ৮২ লাখ টাকার মতো। বন্ড ও শেয়ার ছিল প্রায় ২৪ লাখ টাকার। ডাকঘর, সঞ্চয়পত্র অথবা স্থায়ী আমানত দেখিয়েছিলেন ২ কোটি ১ লাখ টাকা। আসাদুজ্জামান খান দুটি মোটরগাড়ির দাম দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তাঁর ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ও আসবাব ছিল ২ লাখ টাকার। তিনি ঋণ বাবদ ব্যবসার মূলধন দেখিয়েছিলেন ২ কোটি ২০ লাখ টাকার। সোনা দেখান ১০ ভরি, তবে দাম উল্লেখ ছিল না।

হলফনামা অনুযায়ী, আসাদুজ্জামান খানের কৃষিজমির পরিমাণ ১৭১ শতাংশ (৫ বিঘার বেশি), যার অর্জনকালীন মূল্য ১ কোটি ৬ লাখ টাকা। অকৃষিজমি সাড়ে ১৮ শতাংশ, যার অর্জনকালীন মূল্য সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা। তিনি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের ঘরে দুটি সম্পদের মূল্য দেখিয়েছেন। একটি গ্রামের বাড়ি বলে উল্লেখ করেছেন, যার অর্জনকালীন মূল্য ৮০ লাখ টাকা। অন্যদিকে আরেকটির মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে আসাদুজ্জামান খানের সম্পদের অর্থমূল্য ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকার মতো (১০ ভরি সোনার মূল্য বাদে)।

আসাদুজ্জামান খানের সম্পদের অনুসন্ধানও করছে দুদক। জ্ঞাত আয়ের বাইরেও তার সম্পদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। দুদক এ বিষয়ে মামলা করেছে। আদালতে বলা হয়েছে, তিনি অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন ও দখলে রেখেছেন।