সচিবালয় ভাতা চালুর দাবিতে আন্দোলনে নেমে গ্রেফতার হওয়া ১৪ জনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার জামিনের আবেদন নাকচ করে এ আদেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া আসামীরা হলেন- বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবির, সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহীন গোলাম রাব্বানী ও নজরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক মিজানুর রহমান সুমন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রোমান গাজী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক আবু বেলাল, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক কামাল হোসেন ও আলিমুজ্জামান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তায়েফুল ইসলাম, ইসলামুল হক ও মহসিন আলী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক বিপুল রানা বিপ্লব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র রায়, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অফিস সহায়ক নাসিরুল হক নাসি।
বৃহস্পতিবার সচিবালয় থেকে তাকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধ আইনে মামলা করেন বাংলাদেশ সচিবালয়ে ফোর্স হিসেবে কর্মরত এএসআই হাফিজুর রহমান। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গতকাল বুধবার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই কে এম রেজাউল করিম।
প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই জিন্নাত আলী বলেন, আসামীদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করি। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সচিবালয়ে কর্মরত সবার জন্য ২০ শতাংশ সচিবালয় ভাতার দাবিতে বুধবার আন্দোলনে নামেন সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আগের বুধবার বেলা আড়াইটার পর তারা সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে কার্যত ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন তিনি। পরে সরকারি আদেশ (জিও) জারির আশ্বাস পেয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন আন্দোলনকারীরা। তারা জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার মধ্যে জিও জারির আশ্বাস পেয়ে অবস্থান থেকে সরে গেছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় সচিবালয়ে তারা আবারো জড়ো হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সমাবেশ থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির কথাও বলা হয়। পরে সচিবালয় থেকে প্রাথমিকভাবে ৫ জনকে আটক করে হেফাজতে নেয় পুলিশ, পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ জনে।
অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই নানা আন্দোলনের মুখে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে আসছিল পুলিশ। সবশেষ গত বৃহস্পতিবারও নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
গ্রেফতার ১৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত
সচিবালয় ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নেমে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনার পর গ্রেপ্তার হওয়া ১৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারী। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো গত সোমবার ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চারজন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। তারা হলেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো. বাদীউল কবির, অফিস সহায়ক মো. কামাল হোসেন, মো. আলিমুজ্জামান ও মো. নজরুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ মিলিয়ে সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন বরখাস্তের তালিকায়। তারা হলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা রোমান গাজী, শাহীন গোলাম রব্বানী, অফিস সহায়ক মো. আবুল বেলাল, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. তায়েফুল ইসলাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র রায়, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ইসলামুল হক, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মহসীন আলী।
এ ছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক মো. মিজানুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস সহায়ক মো. নাসিমুল হক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক বিপুল রানা বিপ্লবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।