‘জঙ্গি নাটক’ সাজিয়ে ঢাকার কল্যাণপুরে জাহাজবাড়িতে ৯ তরুণ হত্যা মামলায় সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নের্তৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গতকাল বুধবার এই আদেশ দেন। আগামি ২০, ২১ ও ২২ এপ্রিল তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তদন্ত সংস্থা। অন্যরা হলেন- ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ও মিরপুর জোনের সাবেক ডিসি জসিমউদ্দিন মোল্লা। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর গত ২৪ মার্চ পুলিশের সাবেক এই তিন কর্মকর্তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় ট্রাইব্যুনাল।

ওইদিন ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, তদন্ত সংস্থার সাক্ষ্যপ্রমাণে উঠে এসেছে যে, এই তিন পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশ ও পরিকল্পনায় জাহাজবাড়ি হত্যাকা- হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে আটক রাখার আবেদন করছি। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করে। একইসঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৭ মে দিন ধার্য করা হয়েছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি তকমা দিয়ে জাহাজবাড়িতে ৯ তরুণকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে এখানে রেখে হত্যা করা হয়। ইসলামি ভাবধারা সম্পন্ন মানুষের ভেতর ভয়ের সংস্কৃতি চালু করতেই এভাবে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে এভাবে হত্যা করা হত, যাতে শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা যায়।

তিনি বলেন, এই হত্যাকা- ছিল নিষ্ঠুরতম রাষ্ট্রীয় হত্যাকা-। সমালোচনার মুখে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার ক্রসফায়ারের সংস্কৃতি বাদ দিয়ে এভাবে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে মানুষ হত্যা করত। এভাবেই একের পর এক বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করে।

গুলশান হামলার ২৫ দিন পর ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ওই বাড়ির পঞ্চম তলায় অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়িটির নাম তাজ মঞ্জিল হলেও ভবনের আকৃতির কারণে স্থানীয়রা একে জাহাজবাড়ি বলেন, আর সেই নামটি গণমাধ্যমেও উঠে আসে।

অভিযান শেষে সন্দেহভাজন নয় ‘জঙ্গির’ নিহত হওয়ার খবর আসে। হাসান নামে একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হন। পালিয়ে যান একজন। তারা সবাই নব্য জেএমবির সদস্য বলেই দাবি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পরদিন ২৭ জুলাই রাতে মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক মো. শাহজাহান আলম বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬ (২), ৮, ৯, ১০, ১২ ও ১৩ ধারায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।

গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ওই ঘটনার ভিন্ন ভাষ্য আসতে থাকে। এর মধ্যে গত ৬ মার্চ ‘জঙ্গি নাটক’ সাজিয়ে ৯ তরুণ হত্যা মামলার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়।